দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৯:৫৭

এইবার প্রতিমা তৈরি করে জীবনে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছি।

আমার দাদাবাড়ি সিংড়ার গোবিন্দপুরে, যেখানে আমার পূর্বপুরুষেরা মৃৎশিল্পের কাজ করতেন। দাদারও ছিল মৃৎশিল্পের ব্যবসা, আর বাবা নিমাইচন্দ্র পাল দাদার সঙ্গেই কাজ করতেন। বাবার বয়স যখন ১৭, তিনি নাটোরের লালবাজারে এসে আমহাটি গ্রামের প্রতিমাশিল্পী শংকর পালের কাছে কাজ শিখতে শুরু করেন। এরপর প্রায় ৬০ বছর ধরে তিনি প্রতিমাশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন।

 

নাটোরের বাড়িতেই আমার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে প্রতিমা তৈরিতে সাহায্য করতাম, যদিও পেশাজীবনের শুরুতে আমি স্বর্ণকার হিসেবে কাজ করতাম এবং গয়নার ডিজাইন করতাম। তবে বাবার উৎসাহে ২০ বছর আগে আমি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করি, যা এখনো করে যাচ্ছি।

 

আমার বাবা ৭৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর তৈরি প্রতিমা এখনো নাটোরের অনেক মন্দিরে শোভা পাচ্ছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে নাটোরের পুরোনো মন্দিরগুলোতে স্থায়ীভাবে পাথর ও পিতলের প্রতিমা ছিল, যা যুদ্ধের সময় ধ্বংস বা লুট হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এসব মন্দিরের জন্য আমার বাবা মাটির প্রতিমা তৈরি করেন, যা স্থায়ীভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

 

পূজা-পার্বণে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি সারা বছর বিভিন্ন মানুষ ও পশুপাখির প্রতিকৃতি তৈরি করি। আমার পরিবারের সবাই প্রতিমা তৈরির কাজে সাহায্য করে। এখনো আমার কাকা গোপালচন্দ্র পাল এবং বাবার সময়ের কর্মী গোবিন্দচন্দ্র পাল আমার সঙ্গে কাজ করেন। আমার ছেলে অভিজিৎ পালও আমাকে সহযোগিতা করে, এবং সে–ও এই শিল্পকে ভালোবেসেছে। যদিও প্রতিমা তৈরিকে পেশা হিসেবে নেওয়া কঠিন, তবুও পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং দেব-দেবীর আশীর্বাদ পেতে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি।

 

এ বছর আমি ধানের প্রতিমা ছাড়াও আরও দুটি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছি। ধানের প্রতিমাটি বানাতেই বেশি সময় লেগেছে। সারা বছর প্রতিমা ও মূর্তি মিলে প্রায় ১০০টির মতো কাজ করি, যার ফলে গত ২০ বছরে দুই হাজারের বেশি প্রতিমা তৈরি করেছি।

 

শুরুর দিকে একটি দুর্গাপ্রতিমা তৈরিতে পারিশ্রমিক ছিল পাঁচ শ টাকারও কম। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মজুরি বেড়েছে। এবারের ধানের দুর্গাপ্রতিমা বানিয়ে আমি আমার কর্মজীবনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক, প্রায় লাখ টাকা, পেয়েছি।

 

তবে এই প্রতিমা তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রতি বছর নতুন নতুন উপকরণ দিয়ে ভিন্ন ধাঁচের প্রতিমা বানাতে ভালোবাসি, যা গ্রাহকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে। ধানের প্রতিমা তৈরির ধারণাটি লালবাজার কদমতলার সূতম সংঘের মণ্ডপ কমিটির চাহিদা থেকে এসেছে। তাদের পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে আমি কাজ শুরু করি।

 

ধান দিয়ে প্রতিমা আমি আগে কখনো দেখিনি, তবু সাহস করে কাজ শুরু করি। প্রতিটি প্রতিমায় ৫০ হাজার পাকা ধানের দানা আলাদা করে বসানো ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি করার ফলে অবয়বে নতুন রং করার প্রয়োজন হয়নি। ধানের স্বাভাবিক সোনালি আভাই প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে, আর দেব-দেবীর পোশাকও সোনালি রঙের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এটি একটি ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে, যা দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে। কাজটি করতে পেরে আমি ও আমার সহযোগীরা খুবই আনন্দিত। বাকিটা দর্শক-ভক্তরা মূল্যায়ন করবেন।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট