দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৯:৪৮

আমাদের বয়স ৬৩ থেকে ৬৭, আমরা এসেছি এভারেস্ট জয় করতে।

যে বয়সে অনেকের কাছে বাড়ির পাশের পার্কটাও দূরের গন্তব্য মনে হয়, সেই বয়সে তিনজন বাংলাদেশি হিমালয় অভিযানে গিয়েছিলেন। দুই সপ্তাহ ধরে পার্বত্য পথে হেঁটে তাঁরা সফলভাবে এভারেস্ট বেজক্যাম্প অভিযান সম্পন্ন করেন। ষাটোর্ধ্ব বয়সে হিমালয়ে গিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, তা–ই লিখেছেন অভিযাত্রী ইফতেখারুল ইসলাম।

 

এবার দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট বেজক্যাম্পে (ইবিসি) যাচ্ছি—এই ভাবনা শেয়ার করতে কিছুটা দ্বিধা হচ্ছিল, সবাই হয়তো আমাকে পাগল বলবে। বয়স পেরিয়েছে ৬৭। তবু ইবিসি ট্রেকের সঙ্গে এবার নতুন করে অমা দবলাম বেজক্যাম্পকেও যুক্ত করেছি। নতুন গন্তব্যের যুক্তি দেখিয়ে ইবিসি আরেকবার ঘুরে আসার সুযোগও পাচ্ছি।

 

আমার সঙ্গে এবার অভিযানে যোগ দিয়েছেন জালাল আহমেদ ও এনাম চৌধুরী। এভারেস্ট দেখা তাঁদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। দুজনেই তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ও প্রতিষ্ঠিত। বয়স আমার চেয়ে কিছুটা কম, ৬৩ থেকে ৬৪। আমিও তো ঠিক এই বয়সে প্রথমবার ইবিসিতে গিয়েছিলাম। তাই আমি নিশ্চিত, তাঁরা পারবে। কয়েক মাস ধরে তাঁরা খাবার কমিয়ে ও অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি করে ওজন কমিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও সংগ্রহ করেছেন।

 

ইবিসি ট্রেক মাঝারি কষ্টের হলেও ষাটোর্ধ্ব তিনজনের জন্য ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানো সহজ কাজ নয়। লুকলা থেকে ট্রেক শুরু করি, আমাদের গাইড হরি ও পোর্টার সঙ্গে যোগ দেন। প্রথম দিন ফাকদিং পর্যন্ত ট্রেক করে, পরিচিত পর্বতশিখর দেখে আবার সেই মুগ্ধতা অনুভব করি।

 

ট্রেকের মাঝপথে প্রতিদিন ঝুলন্ত সেতু পার হই, হিলারি ব্রিজ পার করে যখন নামচেবাজার পৌঁছাই, তখন আমরা দূর থেকে প্রথমবারের মতো এভারেস্ট দেখি। নামচে থেকে শুরু হয় আমাদের আসল অভিযান। তিন অভিযাত্রী সকালে একসঙ্গে শুরু করলেও যার যার গতিতে চলি। হানি জিঞ্জার লেমন চায়ের জন্য বিরতি নেই, ছবি তুলি, আর পাইনবনের পথে হাঁটতে থাকি।

 

প্যাংবোচে পৌঁছানোর পর জালাল ভাই ও এনাম ভাই ইবিসির পথে এগিয়ে যান, আর আমি অমা দবলাম বেজক্যাম্পে যাই। এখানে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও পর্বতের রূপে মুগ্ধ হয়ে কিছুটা সময় কাটাই। পরদিন আবার ইবিসির দিকে মনোযোগ দিই। দুজনেরই শারীরিক অবস্থা ভালো, কোনো উচ্চতাজনিত সমস্যা নেই।

 

লোবুচের পথে ট্রেক চলাকালীন জালাল ভাই হারিয়ে যাওয়া এভারেস্টজয়ী সজল খালেদের স্মৃতিফলক খুঁজে পান। এই পথের তীব্র ঠান্ডা ও উচ্চতার চাপ সত্ত্বেও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। অবশেষে ২৭ এপ্রিল আমরা গোরাকশেপে পৌঁছে ইবিসির দিকে রওনা দিই। পাথুরে পথে ট্রেক চলতে থাকে, আর সবার সামনে উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছে এভারেস্ট।

 

অবশেষে, এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছে আমরা তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরি। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে—আমরা দাঁড়িয়ে আছি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতের পাদদেশে, যেখানে চারপাশের পর্বত ও প্রকৃতি আমাদের স্বাগত জানায়।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট