আমরা অনেকেই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু প্রায়শই সফলতা অর্জন করতে পারি না। এর ফলে ব্যবসা, সম্পর্ক, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা দেখা দেয়। সম্প্রতি এমন এক ব্যক্তি প্রখ্যাত মনোবিদ ফিলিপা পেরির কাছে পরামর্শের জন্য আসেন। এর জবাবে ফিলিপা বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শতভাগ দেওয়ার চাপ অনুভব না করে ৭০ শতাংশ দিয়ে চলাটাই যথেষ্ট। এতে কাজও হবে এবং মানসিক চাপও কমবে। খবরটি দ্যা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়েছে।
**নিখুঁত হওয়ার চাপ ত্যাগ করুন**
ফিলিপা পেরি জানান, জীবনে সবকিছুতে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা মানুষের সৃজনশীলতা এবং সম্পর্কের ক্ষতি করে। তিনি বলেন, “আপনি যেভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, সেটি অসাধারণ। আপনি নিজের ব্যবসার ৬টি শাখা পরিচালনা করছেন এবং ব্যবসা ঠিকঠাক চলছে। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনি যথেষ্ট দায়িত্ব নিচ্ছেন না। নিখুঁত হওয়ার চেষ্টাই এই সমস্যার মূল কারণ। ৭০ শতাংশ দিয়ে কাজ চালান; এতে আপনার জীবন সহজ হবে এবং আপনি মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকবেন।” তিনি আরও বলেন, অনেকেই ‘আমার এটা করা উচিত’ ধরনের চাপ অনুভব করেন, যা মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়ায় এবং কাজে গতি আনতে পারে না। বরং, আপনাকে আসলে কী করতে চান, সেই অনুভূতিগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
**নিজের অনুভূতির গুরুত্ব**
ফিলিপা পেরি বলেন, “জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিতে হবে এমন নয়। কখনো কখনো যা ভালো লাগে তা-ও করতে হয়, নয়তো আপনি পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।” তিনি উল্লেখ করেন, মানুষের মধ্যে এক ধরনের ‘অভ্যন্তরীণ শাসক’ থাকে, যাকে ‘টপ ডগ’ বলা হয়, যা বলে, “আপনার এই কাজটি করা উচিত।” কিন্তু আমাদের ভিতরে আরো একটি সত্তা রয়েছে, যাকে ‘আন্ডারডগ’ বলা হয়, যা বলে, “আমি এটা করব না।” যখন আপনি সবকিছু নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করবেন, তখন এই আন্ডারডগ আপনার বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করবে।
**পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো জরুরি**
ফিলিপা বলেন, “পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ছোট মেয়ের সঙ্গে খেলুন, প্রতিদিন তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন। সময় নিয়ে তার সঙ্গে আনন্দের মুহূর্ত কাটান এবং তাকে দায়িত্বের পরিবর্তে একজন মানুষ হিসেবে দেখুন। এতে করে আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। কখনোই তাড়াহুড়ো করে নয় বরং উপভোগ্য বিষয় হিসেবে নিন।”
**স্ত্রী এবং পরিবারের সাথে সম্পর্ক মজবুত করুন**
স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা সমাধানে খোলামেলা কথা বলার পরামর্শ দেন ফিলিপা। তিনি বলেন, “আপনার বর্তমান মানসিক অবস্থার কথা স্ত্রীকে জানান, যাতে আপনার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়। ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে পারেন, যেমন—বারবিকিউ করা বা একসঙ্গে আনন্দের সময় কাটানো।”
**জীবনের শেষ সময়ে আফসোস করবেন না**
ফিলিপা আরও বলেন, “বয়স হলে মানুষ মৃত্যুশয্যায় এসে সবচেয়ে বেশি আফসোস করে, পরিবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটায়নি। এই ধরনের আফসোস থেকে বাঁচতে এখন থেকেই পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটান এবং তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন।”