মিষ্টিজাতীয় খাবার প্রায় সবারই পছন্দ। খুশির সংবাদ পেলে আমরা প্রথমেই মিষ্টির দোকানে ছুটে যাই, কারণ আমাদের উৎসব মিষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, চিনিকে কেন ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়? চিনিকে প্রায়ই ‘হোয়াইট পয়জন’ বলা হয়। ১ গ্রাম চিনি থেকে ৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়, যা ৩.২ গ্রাম ভাত থেকেও পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের মাঝে চাল, ভাত বা রান্নার তেল খাওয়ার ক্ষেত্রে চিনির মতো ভয় কাজ করে না, যদিও এগুলো সবই শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট।
#### চিনি কেন সবচেয়ে ক্ষতিকর?
একটি খাবার রক্তে যত দ্রুত গ্লুকোজ ছাড়ে, সেটাকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বলে। সাদা চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত্যন্ত উচ্চ, যা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ রূপে মিশে যায়। এর ফলে দ্রুত ক্ষুধা অনুভব করি এবং আমরা বারবার খাবার খাই, যা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের দিকে পরিচালিত করে। ফলস্বরূপ, আমাদের ওজন, ট্রাইগ্লিসারাইড, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
ভাত, চাল ও আটার মতো কার্বোহাইড্রেট চিনির মতো দ্রুত সুগার ছাড়ে না। এগুলো ধীরে ধীরে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং শরীরের কোষে শক্তি উৎপন্ন করে। তাই এগুলো বেশি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
#### তাহলে কি চিনি একেবারেই বাদ দেব?
সরাসরি চিনি খাওয়া উচিত নয়, তবে ডায়াবেটিস না থাকলে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে ৪ থেকে ৫ চামচ চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। সরাসরি চিনি না খেয়ে মাঝে মাঝে বিস্কুট, কেক বা পিঠা খেতে পারেন। চা বা কফিতে চিনি বাদ দেওয়াই ভালো। ফল ও দই ডেজার্ট হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
লাল চিনি বা গুড় কিছু ভিটামিন ও মিনারেল বেশি রাখলেও, এগুলোও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে কারণ এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও উচ্চ।
#### অতিরিক্ত চিনি খেলে কি হয়?
১. **স্থূলতা:** অতিরিক্ত চিনির কারণে ওজন বাড়ে, যা টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. **ফ্যাটিলিভার:** অতিরিক্ত চিনি লিভারে জমা হয়ে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।
৩. **উচ্চ রক্তচাপ:** শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়লে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে।
৪. **হার্টে ব্লক:** অতিরিক্ত চিনির কারণে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে, যা হার্টের ব্লক তৈরিতে সাহায্য করে।
৫. **বিষণ্নতা ও স্নায়ুরোগ:** অতিরিক্ত চিনির ফলে বিষণ্নতা, পারকিনসন ও আলঝেইমারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬. **ক্যানসার:** চিনির কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জটিলতা বাড়ে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
তাহলে, চিনির গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। মনে রাখবেন, চিনি শরীরের জন্য উপকারী নয় বরং ক্ষতিকর।
— মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।