ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমাদের মধ্যে ক্লান্তি, বিভ্রান্তি এবং রাগের মতো আবেগগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে, যার জন্য মূলত দায়ী গ্লুকোজ। গ্লুকোজ, যা আমাদের রক্তে সঞ্চালিত হয়, শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। যখন এর মাত্রা কমে যায়, তখন শরীর তা পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। গ্লুকোজের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শরীরের কোষের শক্তির প্রধান উৎস এবং মস্তিষ্ক প্রায় পুরোপুরি এর ওপর নির্ভর করে। গ্লুকোজ ছাড়া মস্তিষ্কের ১০০ বিলিয়ন স্নায়ু কোষ তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে পারে না। যখন শরীরে গ্লুকোজের অভাব ঘটে, তখন আমরা দুর্বলতা, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ঘোরা এবং মনোযোগের অভাব অনুভব করি। আবার খুব বেশি গ্লুকোজের কারণে দীর্ঘ সময় খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি হলে মানুষ কোমাতে চলে যেতে পারে।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ফিরিয়ে আনতে শরীর বিভিন্ন সংকেত পাঠায়, যা আমাদের খাবার গ্রহণে প্ররোচিত করে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, এর মধ্যে গ্রীলিন উল্লেখযোগ্য। এটি পাকস্থলীর কোষ থেকে উৎপন্ন হয়ে হজম প্রক্রিয়ায় কাজ করে এবং ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
কিন্তু কেন খাবার গ্রহণ করছি না সে কারণে গ্রীলিনের পাশাপাশি চাপ সৃষ্টিকারী কর্টিসলও উদ্দীপিত হয়। কর্টিসল গ্লুকোনোজেনেসিস নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি লিভারে সঞ্চিত ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনের ভাঙ্গন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন করে, ফলে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
ক্ষুধার্ত অবস্থায় কর্টিসলের উপস্থিতি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এটি ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা পরিবর্তন করে, যার ফলে খারাপ মেজাজ বা রাগ অনুভূত হয়।
এটি শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে নয়, জেব্রাফিশের আচরণেও দেখা গেছে যে ক্ষুধার্ত হলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
এমন পরিস্থিতির বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা রয়েছে। খাবার ঘাটতির কারণে আক্রমণাত্মক হওয়া শিকারি বা খাবার সংগ্রহকারীদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। যদিও আজকাল আমরা আর সেইভাবে খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা করি না, তবুও ক্ষুধা লাগলে শরীরের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
যদি আপনি রাগান্বিত বা বিরক্ত বোধ করেন, তাহলে এটি ক্ষুধার ফল হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার হাতের কাছে রাখলে তা কেবল শক্তি জোগাবে না, বরং আপনাকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজে রাখতে সহায়তা করবে।
এই নিবন্ধটি দ্য কনভার্সেশনে প্রকাশিত বায়োমেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ মালাগার (আইবিআইএমএ) গবেষক লিলিয়া কাজান্তসেভা লিখেছেন।