মিথিলা এবং সামদানির বিয়ে হয়েছিল রাজকীয় অনুষ্ঠানে। তারা দুজনেই ধনী পরিবারের একমাত্র সন্তান। সামদানির মা মিথিলাকে গয়না দিয়ে সম্পূর্ণ সাজিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়েতে আসা প্রত্যেক অতিথিই মনে করেছিলেন, মিথিলার ভাগ্যে রাজকপাল এঁটে গেছে।
কিন্তু বিয়ের মাত্র দুই দিন পর থেকেই মিথিলা শ্বশুরবাড়িতে অস্বস্তি অনুভব করতে শুরু করেন। নববিবাহিত স্ত্রী হিসেবে সামদানির সঙ্গে বালির সফরের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু টিকিটের সংখ্যা তিনটি, মিথিলা জানতেন না যে শাশুড়িও তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায়, সামদানি তার মায়ের ছাড়া কিছুই বুঝতে পারছেন না। দাওয়াতে শুধু দুজনেই যাচ্ছেন, কিন্তু সব জায়গাতেই মায়ের উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটল, যখন মিথিলা জানলেন, তার প্রথম ক্রাশ এবং বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখার গোপন গল্পও শাশুড়ির কাছে পৌঁছে গেছে। এর মানে, স্বামী-স্ত্রীর কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ও আর গোপন থাকছে না।
সামদানি এত দিন তার সব কথা মায়ের সঙ্গে শেয়ার করে এসেছে। বিয়ের পরও মাকে দূরে ঠেলে দিতে পারছে না। ফলস্বরূপ, মিথিলা-সামদানির রাজকীয় বিয়ে ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো। গোটা বিশ্ব জানে, মিথিলা তার স্বামীকে মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন।
অন্যদিকে, নুরজাহান এবং সোহেলের সম্পর্কেও একই ধরনের সমস্যা চলছে। বাবাহারা সোহেল এবং তার বোন আসমাকে মা একাই বড় করেছেন। তিনজন একে অপরের জন্য আক্রমণ ও রক্ষা হয়ে থেকেছেন। সোহেল তার সমস্ত বেতন মায়ের হাতে তুলে দেন এবং নুরজাহানের জন্য হাতখরচও বরাদ্দ থাকে না। নুরজাহান লেখাপড়া শুরু করতে চাইলে মায়ের অনুমতি পান না, যার ফলে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে, সোহেল দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং মায়ের চাপের মুখে নুরজাহান গর্ভপাত করান।
বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন নুরজাহান, যাদের বিচ্ছেদ হয়নি, কিন্তু তারা আলাদা থাকছেন। মায়ের অনুমতি না পাওয়ায় সোহেল নুরজাহানকে ফিরিয়ে আনতে পারছে না।
পিয়া এবং শান্তনুর পরিস্থিতি আবার আলাদা। শান্তনুর বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এলে পিয়ার যাওয়ার বিরুদ্ধে মায়ের আপত্তি আসে। ফলে, শান্তনুর লেখাপড়ার জন্য পিয়াকে আটকে রাখা হয়। শান্তনুর মা লেখাপড়ার অজুহাতে পিয়াকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পিয়া হতবাক হয়ে বুঝতে পারে যে, শান্তনু আসলে তার মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাদের সম্পর্ক পাঁচ বছর টিকলেও বিয়ের মাত্র দেড় বছর পর ভেঙে যায়।
সামদানি, সোহেল এবং শান্তনুকে এক কথায় ‘মাম্মাস বয়’ বলা যায়। তারা বিয়ের পরেও মায়ের থেকে বের হয়ে স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দিতে পারেননি।
মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইডের মাস্টার ট্রেইনার ডাক্তার নাজিয়া হক বলেন, “মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে, কিন্তু সেটি স্বাস্থ্যকর হতে হবে।” তিনি বলেন, অনেক ছেলের মায়ের প্রতি অতিরিক্ত সংযুক্তি থাকে, যা স্ত্রীর জন্য সমস্যা তৈরি করে। একজন পুরুষের দায়িত্ব হলো, তার মা ও স্ত্রীর মধ্যে ভারসাম্য রাখা।
যদি একজন পুরুষ স্ত্রীকে অগ্রাহ্য করে মায়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে সমস্যা সৃষ্টি হবে। বিয়ের পর যদি বোঝা যায় যে স্বামী আসলে একজন ‘মাম্মাস বয়’, তাহলে তাকে নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। স্বামীকে বুঝতে হবে, মা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, স্ত্রীকেও যথাযথ সম্মান দিতে হবে।
এছাড়া, পরিবারের জন্য একটি পরামর্শও দিয়েছেন নাজিয়া হক: “প্রতিটি পরিবারের উচিত বিবাহপূর্ব কাউন্সেলিং বা আলোচনার মধ্য দিয়ে যাওয়া। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে, সেই সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করা উচিত।”