টাক চিকিৎসায় হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা চুল প্রতিস্থাপন অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাথার এক অংশ থেকে চুল সংগ্রহ করে অন্য অংশে স্থাপন করা হয়। মাথার পেছন দিক এবং কানের পাশের অংশকে ‘পারমানেন্ট জোন’ বলা হয়, যেখানকার চুল সাধারণত পড়ে না। মাথার সামনের অংশ, যা ‘টেম্পোরারি জোন’ নামে পরিচিত, নানা কারণে চুল পড়ে টাকের সৃষ্টি হয়। ট্রান্সপ্ল্যান্টের সময় পারমানেন্ট জোন থেকে চুল নিয়ে টেম্পোরারি জোনে প্রতিস্থাপন করা হয়।
### কারা উপযুক্ত
যেসব পুরুষের সামনের অংশে চুল পড়ে গেছে, কিন্তু পেছনের অংশে চুল এখনও আছে, তাদের জন্য হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যকর। নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চুল পড়ে গেলে বা সামনে চুল পাতলা হয়ে গেলে, মাথার আঘাতজনিত চুল ক্ষতি হলে এবং যাঁদের স্থায়ী টাক হয়েছে, তাদের জন্যও এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। তবে চুল পড়ার মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রতিকার করতে হবে। খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, অসুস্থতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং চুলের সঠিক পরিচর্যার অভাবও চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া বংশগত কারণেও অনেকের কম বয়সে টাক পড়তে পারে।
### পদ্ধতি
প্রথমে মাথার ত্বক জীবাণুমুক্ত করে এবং লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে টাকের অংশ অসাড় করা হয়। দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: স্ট্রিপ এক্সসিশন এবং ফলিকুলার ইউনিট এক্সট্রাকশন (FUE)। স্ট্রিপ এক্সসিশন পদ্ধতিতে মাথার পেছনের ত্বকের একটি অংশ কেটে সেই চুল টাকের অংশে স্থাপন করা হয়। FUE পদ্ধতিতে ফলিকল তুলে এনে সরাসরি টাকের অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। এক সেশনে শত শত বা হাজারেরও বেশি চুল প্রতিস্থাপন করা যায়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় নেয় এবং পরে ব্যান্ডেজ করা হয়।
### পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো প্রতিস্থাপিত চুল সাময়িকভাবে পাতলা হয়ে যাওয়া। মাথার ত্বক বা কপালের কিছু অংশ ফুলে যেতে পারে, এবং চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিস্থাপিত চুল কিছুদিন পর ঝরে যায়, যা স্বাভাবিক। দুই থেকে তিন মাস পরে নতুন চুল গজাতে শুরু করে এবং পূর্ণ ফল পেতে ছয় মাস সময় লাগে।
### সতর্কতা
ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর ক্ষত সেরে উঠতে এবং ব্যথা কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়। চুলের পুনঃবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য মিনোক্সিডিল, ফিনাস্টারাইড বা পিআরপি থেরাপি দেওয়া হতে পারে। প্রতিস্থাপনের পর সূর্যের আলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
### যাঁদের জন্য নয়
যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের কারণে চুল পড়ে গেছে বা কেমোথেরাপি চলছে, যাঁদের মাথায় সম্পূর্ণ টাক, এবং যাঁদের আঘাত বা অস্ত্রোপচারের কারণে মাথার ত্বকে ফাইব্রাস কেলয়ড দাগ হয়েছে, তাদের জন্য হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট উপযুক্ত নয়।