সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় সেলিব্রিটি বা অনলাইন ব্যক্তিত্বদের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারি এবং নিজেদের অনুভূতির কথা তাদের জানাতে পারি। বেশিরভাগ সময় এই সংযোগ ইতিবাচক হলেও কখনও কখনও এটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
‘প্যারাসোশ্যাল সম্পর্ক’ ধারণাটি প্রথম ১৯৫৬ সালে উত্থাপিত হয়, যা বোঝায় যে মানুষ টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাদের প্রিয় তারকাদের ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পেয়ে একতরফা একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের ফলে এই সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে সেলিব্রিটিরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেন, যেন তারা তাদের ভক্তদের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। তারা নিজেদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে ফ্যানদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন এবং তাদের পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করেন।
জনপ্রিয় লেখক বেলা ম্যাকি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথম বই প্রকাশের পর তিনি ইন্সটাগ্রামে যোগ দেন এবং তার পোস্টগুলো মূলত মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কিছু ফলোয়ার তার কাছ থেকে একতরফা প্রত্যাশা করতে শুরু করে। কেউ কেউ তার জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে মন্তব্য করে, আবার কেউ কেউ তাকে এমনভাবে মেসেজ পাঠায় যেন তারা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়।
একবার, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর একজন মহিলা তার মেসেজে সহানুভূতি জানালেও পরে ক্ষুব্ধ হয়ে জানান যে কেন তিনি তার মেসেজের উত্তর দেননি। বেলা আরও বলেন, কিছু ফলোয়ার তাকে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ জানান, যেমন একসাথে খাবার খেতে যাওয়া বা কুকুর নিয়ে হাঁটতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন, যা তাকে অপরাধবোধে ফেলে।
ম্যাকি আরও উল্লেখ করেন যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক ধরনের ‘ঘৃণা ফলো’ করার প্রবণতা দেখা যায়। কিছু মানুষ যারা একটি সেলিব্রিটিকে অপছন্দ করে, তারা তবুও নিয়মিত ফলো করে, সমালোচনা করে এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তুচ্ছ আলোচনা করে। যদিও অনলাইনে অনেক সম্পর্ক ইতিবাচক হয়, কিছু সম্পর্ক এমন একটি মাত্রায় পৌঁছায় যা অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। ম্যাকির মতে, আমাদের উচিত এসব সম্পর্ককে বাস্তবতা থেকে আলাদা রাখতে শেখা এবং বুঝতে হবে যে অনলাইন সম্পর্ক বাস্তব সম্পর্কের মতো নয়।
অনুবাদ: দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে।