দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:২৮

“রক্তে ভেজা টি-শার্টটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র মাহবুবুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হন। ১৫ জুলাই সকালে মেসের বন্ধু ও রুমমেটদের মধ্যে একটি চাপা শঙ্কা অনুভব করছিলাম। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা করেছিলেন—আন্দোলনকারীদের দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তাই বুঝতে পারছিলাম, আজ আমাদের ওপর আক্রমণ হতে পারে। কিন্তু তাও ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার না হলে পরের প্রজন্মের কাছে কী জবাব দেব! এছাড়া, আমাদের নারীসমাজও আমাকে অনুপ্রাণিত করছিল; দেখেছি, আন্দোলনে মেয়েরা কতটা অগ্রগামী। একজন বোন যদি হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্দোলনে অংশ নিতে পারে, আমি কেন পারব না!

 

সেদিন আমাদের কর্মসূচি ছিল শহরে। দুপুর আড়াইটার শাটল ট্রেনে উঠলাম, কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও ট্রেন ছাড়ছিল না। বাইরে বের হয়ে দেখি, ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাচ্ছে—তার ছাত্রত্ব বাতিল ও আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর মুচলেকা আদায়ের জন্য। আমরা শাটলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে ক্যাম্পাসে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং রাফিকে উদ্ধার করতে প্রক্টর অফিসের দিকে রওনা হই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের কাছাকাছি আসার পর ছাত্রলীগ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মিছিলের সামনের সারিতে থাকায় তাদের সব হিংস্রতা আমার ওপর নেমে আসে। মাথায় আঘাত লেগে রক্তে ভিজে যাই। ধূসর টি-শার্টটি খয়েরি হয়ে যায়। রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না, আমি ভেবেছিলাম, এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত। একজন উপস্থিত ব্যক্তি আমাকে রিকশায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে যেতে বলেন। মাথায় পাঁচটি সেলাই হয়। রথযাত্রার ব্যস্ত সময়ে, আমার অনুষদের ড. রূদ্রপ্রতাপ দেবনাথ স্যার আমাকে দেখতে আসেন। ওই রাতেই আমার মেজ ভাই চট্টগ্রামে আসেন এবং পরদিন আমাকে লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন।

 

বাড়িতে এসেও শান্তিতে থাকতে পারিনি। স্কুলের অনুজেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার বিষয়ে লিখলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের রোষে পড়ি। আমাকে ‘নব্য রাজাকার’ আখ্যায়িত করা হয়। শুনেছিলাম, আওয়ামী লীগের নেতারা আমার নাম তালিকাভুক্ত করেছে—যেকোনো সময় গ্রেপ্তার বা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে পারি। এই আতঙ্কে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারতাম না। বেশিরভাগ রাত নির্ঘুম কেটেছে। তবু আমি দমে যাইনি। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। মৃত্যুর ভয় তখন একেবারে কেটে গিয়েছিল।

 

৫ আগস্ট—সব কষ্ট যেন নিমেষে উধাও হয়ে গিয়েছিল। রক্তে ভেজা আমার টি-শার্টটি এখনো স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। পরবর্তী প্রজন্মকে যেন বলতে পারি, তার পূর্বপুরুষ কাপুরুষ ছিল না। এই টি-শার্ট অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আমাকে আজীবন অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট