পোষা বিড়াল-কুকুরকে প্যাকেটজাত খাবার দেন অনেকেই। প্যাকেটজাত খাবার দেওয়া অনেকের জন্যই হয়তো বেশ সুবিধাজনক। খাবার তৈরি বা গরম করার ঝামেলা নেই, খাওয়াদাওয়ার পর জায়গাটা পরিষ্কার করাও সহজ। তবে ক্রমাগত কেবল প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার কারণে কিন্তু আপনার পোষা প্রাণী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই ঘরের খাবারের অভ্যাস করানোই ভালো।
প্যাকেটজাত শুকনা খাবার খেলে পোষা প্রাণীর ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাতে বাড়ে নানা রোগের ঝুঁকি। আর শুকনা খাবার দিলে যদি আপনি ওদের পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে পানিশূন্যতা, মূত্রনালির প্রদাহ, এমনকি কিডনিতে পাথরের ঝুঁকিও সৃষ্টি হতে পারে। তাই ঘরের খাবারই প্রাণীদের জন্য নিরাপদ। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ফারমিলিয়ন ভেটেরিনারি ক্লিনিকের প্রাণিচিকিৎসক ডা. ফাতিহা ইমনূর।
অভ্যাস গড়তে
যে বিড়াল বা কুকুরটিকে আপনি পালবেন, সে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেতে শুরু করলেই ওকে ঘরের খাবারে অভ্যস্ত করে তোলা প্রয়োজন। সেদ্ধ করা মুরগির মাংস বিড়াল-কুকুরের জন্য ভালো। সেদ্ধ করার সময় সামান্য লবণ দিতে পারেন। অন্য মসলা দেবেন না। প্রয়োজনে মাংস একটু ছোট করে ছিঁড়ে দিন। এভাবেই সে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস হলে পরবর্তী সময়ে হঠাৎ একদিন আপনি ঘরের খাবার সামনে দিলেই কিন্তু ও সেটি খেয়ে নেবে না। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে ওকে ঘরের খাবারে ফেরত আনাটা বেশ ধৈর্যেরই ব্যাপার বটে।
এক–আধটু, অল্প-স্বল্প?
মাঝেমধ্যে প্যাকেটজাত খাবার দিলে অবশ্য খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। কিন্তু মুশকিল হলো, প্যাকেটজাত খাবারের স্বাদ পেয়ে যাওয়ার পর অনেক প্রাণীই আর স্বাভাবিক খাবার গ্রহণের অভ্যাসে ফিরে আসতে পারে না। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে মুশকিলে পড়েন অনেকেই। তা ছাড়া আমদানি করা এসব প্যাকেটজাত খাবারের সংকটও দেখা দিতে পারে কখনো কখনো। তাই প্যাকেটজাত শুকনা খাবার অল্প পরিমাণেও না দেওয়াই ভালো। তবে মাঝেমধ্যে প্যাকেট বা ক্যানের নরম বা ভেজা খাবার দিতে পারেন। তাতে ক্ষতি নেই।
অভ্যাস বদলানোর জন্য
প্যাকেটজাত শুকনা খাবারে বিড়াল বা কুকুর অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তা থেকে ওকে ফিরিয়ে আনতে আপনাকে বেশ পরিশ্রম করতে হবে। খাবার হিসেবে মুরগির মাংসই ভালো। মসলা ছাড়া সেদ্ধ করা সামান্য মাংসের ওপর ছড়িয়ে দিন বেশ খানিকটা প্যাকেটজাত খাবারের গুঁড়া। সেদ্ধ করার সময় সামান্য লবণ দিতে পারেন। প্যাকেটজাত খাবারের গুঁড়ার ঘ্রাণে সে মাংসটা খেয়ে নেবে। এরপর ধীরে ধীরে গুঁড়া খাবারের পরিমাণ কমিয়ে মাংসের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এভাবে একসময় গুঁড়া খাবার ছাড়াই মাংস খেতে শিখবে আপনার আদরের প্রাণীটি। তবে এই অভ্যাস করতে আপনার অনেক দিন সময় লেগে যেতে পারে। ধৈর্য হারালে চলবে না। প্রয়োজনে প্রথম দিকে মাংস ব্লেন্ড করে শুকনা খাবারের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে মাংস ছাড়াও কোনো কোনো বেলা সেদ্ধ মাছ খেতে দিতে পারেন। মাছও সেদ্ধ করুন একইভাবে, মসলা ছাড়া। কেবল সামান্য লবণ দেওয়া যেতে পারে সেদ্ধ করার সময়।