দ্যা নিউ ভিশন

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫ ১৯:৫৬

পুষ্টিগুণে সাদা চালের চেয়ে এগিয়ে কালো চাল, বলছেন গবেষকেরা

কালো চালের তৈরি নানা খাবার

ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঘন দুধের পায়েস কিংবা মচমচে তেল পিঠা—এসব বাঙালির বড্ড চেনা। এবার চেনা পিঠার ‘রূপ’, গুণ ও স্বাদেই নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। কালো চালের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা। গত ২৫ জানুয়ারি এই চাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার তাঁরা হাজির করেছিলেন দর্শনার্থীদের সামনে।

গবেষকেরা বলছেন, কালো চাল দেখতে যেমন চমকপ্রদ, তেমনি পুষ্টিগুণেও সাদা চালের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে। গবেষক দলের প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. ছোলায়মান আলী ফকির জানালেন, রঙিন চাল দেখতে লাল, কালো, বেগুনি কিংবা বাদামি হতে পারে। এর মধ্যে লাল ও কালো রঙের চাল নিয়ে তিন বছর ধরে গবেষণা করেছেন তাঁরা। তাঁদের গবেষণায় চালের বাইরের আবরণে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চালে জিংক ও আয়রনের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো চালে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ ১ হাজার ১২০ থেকে ৭ হাজার ৩৫ মিলিগ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি প্রায় অনুপস্থিত।

এ ছাড়া কালো চালের প্রতি গ্রামে মোট ফিনলের পরিমাণ ৭ থেকে ১০ মিলিগ্রাম এবং ফ্লাভোনয়েডের পরিমাণ ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, যা সাদা চালের তুলনায় এক থেকে দেড় গুণ বেশি। এই অ্যান্থোসায়ানিন, ফিনল ও ফ্লাভোনয়েড অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি এগুলো অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন, যা দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। বিশেষত, এশিয়ার মানুষের খাদ্যতালিকায় জিংক ও আয়রনের ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা। কালো চাল সেই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই গবেষকেরা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কালো চাল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

প্রধান গবেষকের সঙ্গে এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।

রঙিন চালের পুষ্টিগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে এই চাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার প্রদর্শন করে গবেষক দল। কালো চালের ময়দা দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা ছিল নারকেল কুচি ও খেজুরের গুড় দিয়ে সাজানো। এর রং যেমন নজরকাড়া, স্বাদও একটু আলাদা। চিতই পিঠার ঘ্রাণটা বেশ লাগল। তেল পিঠা, কেক ও হালুয়াতেও কালো চালের ব্যবহার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কালো চাল দিয়ে তৈরি পায়েসও ছিল অন্যতম আকর্ষণ। পাশাপাশি ছিল কালো চালের চিড়া, খিচুড়ি, যা স্বাস্থ্যকর নাশতার ভালো উদাহরণ।

এত ‘রূপ’ ও গুণ থাকার পরও কেন দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না এই রঙিন চাল? জানতে চাই গবেষক দলের কাছে। অধ্যাপক ছোলায়মান বলছেন, ‘কালো চাল দেখতে কিছুটা অস্বাভাবিক বলে অনেকেই এটি খেতে আগ্রহী হন না। দেশের মানুষ সাধারণত সাদা চাল দেখে অভ্যস্ত। তাই ভিন্নরকম এই চাল নিয়ে তারা এখনো উদাসীন। অথচ এই চালের পুষ্টিগুণ আমাদের প্রতিদিনের খাবারের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। তাই মানুষের পছন্দের দিকে লক্ষ রেখে মুখরোচক খাবার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। যে খাবার দেখতে ভালো লাগে, মানুষ তা খেতে আগ্রহী হয়। এ জন্য কালো চালকে বিভিন্ন আকর্ষণীয় খাবারে রূপান্তর করা হয়েছে।’

কৃষকদের জন্যও কালো চাল একটি সম্ভাবনাময় ফসল বলে দাবি করছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এর উচ্চ বাজারমূল্য এবং আন্তর্জাতিক রপ্তানির সুযোগ দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। রঙিন খাবারের সৌন্দর্য আর পুষ্টি মিলিয়ে এটি হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যৎ খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ