তিন শব্দের ছোট্ট একটি বাক্যে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে দেওয়া আপাতদৃষ্টিতে খুব সহজ। ‘আই লাভ ইউ’ বা ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’—নেহাতই সরল সেই বাক্য। তবে অনেকেই মনের কথাটা মুখে বলতে পারেন না। অনেকে আবার সম্পর্কের শুরুতে ভালোবাসার কথা মুখে বললেও পরবর্তী সময়ে আর খুব একটা বলেন না। আদতে কতটা জরুরি ‘ভালোবাসি’ শব্দটা বলা?
আপনি এমন বহু দম্পতিকেই চিনতে পারেন, যাঁরা ‘ভালোবাসি’ শব্দটি খুব একটা বলেন না। অথচ তাঁদের ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ়। এ দেশের সংস্কৃতিতে ভালোবাসার প্রকাশটা একটু আড়ালেই থেকেছে বহু কাল ধরে। তবে এখনকার প্রেমিকযুগল কিংবা দম্পতিদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটাই আলাদা। ভালোবাসার প্রকাশে তাঁরা অনেক বেশি ‘সাহসী’। তা ছাড়া ভালোবাসা প্রকাশের বহুমুখী সহজ মাধ্যমও আছে এখন। ভালোবাসা প্রকাশের মনস্তাত্ত্বিক দিক প্রসঙ্গে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।
ভালোবাসাই তো সম্পর্কের ভিত্তি
ভালোবাসার ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে একটি চমৎকার সম্পর্ক। গড়ে ওঠে একটি পরিবার। ভেবে দেখুন, আপনার সঙ্গী যদি আপনাকে ‘ভালোবাসি’ বলেন, আপনি নিশ্চয়ই আপ্লুত হবেন। যদিও আপনি এমনিতেই জানেন, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। তবু ভালোবাসার এই প্রকাশে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করবে আপনার মধ্যে। একইভাবে আপনি যদি তাঁকে ভালোবাসার কথা বলেন, তাঁরও দারুণ ভালো লাগবে। তাই মাঝেমধ্যেই ‘ভালোবাসি’ বলুন সঙ্গীকে। সম্পর্কটা সতেজ থাকবে। আধুনিক জীবনের বহুমুখী চাপে ঘরে-বাইরে পিষ্ট হন অধিকাংশ মানুষই। ভালোবাসা আর মায়ায় জড়ানো একটা সম্পর্কে থাকলে জীবনের অন্যান্য চাপ সামলানো সহজ হয়ে ওঠে।
কেবলই কথার কথা নয়
‘ভালোবাসি’ বলবেন তো নিশ্চয়ই। কিন্তু তা যেন কেবল কথার কথা হয়ে না দাঁড়ায়। বলার জন্যই বলছেন, এমনটা মনে না হয়। হৃদয়ের নিবিড়তম অনুভূতির প্রকাশটা হোক দুর্দান্ত, আবেগময়। একটা নতুন দিনের শুরুতে কাকডাকা ভোরে আপনি তাঁকে বলতে পারেন ‘ভালোবাসি’। সারা দিনের কাজের শেষে ক্লান্তিমাখা রাতের নীরবতার মধ্যেও আপনি এই একটি শব্দ দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন নিজের অনুভূতি। আদতে ‘ভালোবাসি’ বলার তো কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। যখন ইচ্ছা, তখনই তাঁকে বলতে পারেন ভালোবাসার কথা। প্রেমের কবিতার দুটি চরণ আবৃত্তি করতে পারেন কেবল তাঁর জন্য। আর সব সময় যে ভালোবাসার কথা সামনাসামনিই বলতে হবে, তেমনটাও নয়। ‘ভয়েস মেসেজ’, অর্থাৎ কণ্ঠবার্তাও দিতে পারেন। কিংবা লিখে পাঠাতে পারেন খুদে বার্তা। বছরের পর বছরজুড়ে এভাবেই হোক ভালোবাসার বহুমাত্রিক প্রকাশ।
যেমন কথা তেমন কাজ
‘ভালোবাসি’ বলা যেমন জরুরি, তেমনি ভালোবাসার ভিন্নতর প্রকাশও জরুরি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সঙ্গীকে সময় দিন। দুজন আলাদাভাবে সময় কাটান। সাংসারিক প্রয়োজনের কথার বাইরেও অন্য কথা বলুন সঙ্গীকে। মাঝেমধ্যে ছোট কোনো উপহার দিতে পারেন তাঁকে। একটা ফুল দিতে পারেন। সঙ্গী যদি বিশেষ কোনো দিনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, আপনি সে দিনটি ভুলে যাবেন না যেন! সেটি হতে পারে আপনাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিন, বিয়ের দিন কিংবা ভালোবাসা দিবস। খুব দামি উপহার দেওয়া কিংবা দামি রেস্তোরাঁয় খাওয়াটা জরুরি নয়। ফুটপাথের ২০ টাকার গোলাপেও স্বর্গীয় হয়ে উঠতে পারে প্রেম।
আরও যা
সঙ্গীর প্রশংসা করুন। তাঁকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আপনার জন্য কিংবা সংসারের জন্য যা কিছু করেন, সবটাকেই ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ ধরে নেবেন না। অর্থাৎ ভেবে নেবেন না ‘এসব তো ওরই করার কথা’। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন তাঁর প্রতি। সঙ্গীর কাজে সহায়তা করুন, মানসিক সমর্থন দিন। পাশে থাকুন। এসবই ভালোবাসার প্রকাশ। তবে কাউকে প্রথমবার ‘ভালোবাসি’ বলার আগে সময় নিন। তাঁর সম্পর্কে জানুন। তাঁর সঙ্গেই আপনি জীবন কাটাতে চান কি না, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন। তবে সিদ্ধান্ত নিতে অতিরিক্ত দেরিও করবেন না।