### প্রথম টেস্টটিউব বেবি লুইস ব্রাউন: যুগান্তকারী জন্ম ও লেসলির দুঃসাহসিক জীবন
১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইতিহাস সৃষ্টি করে জন্ম নেন লুইস ব্রাউন, বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব বেবি। এই বিপ্লবী পদক্ষেপের পেছনে ছিলেন তিনজন ব্রিটিশ চিকিৎসক: রবার্ট এডওয়ার্ড, প্যাট্রিক স্টেপটো এবং জন পার্ডি। তাঁরা প্রথম সফলভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু শরীরের বাইরে নিষিক্ত করে সেই ভ্রূণ আবার জরায়ুতে স্থাপন করেন। ফলে জন্ম হয় লুইস ব্রাউনের।
### লুইস ব্রাউনের জন্ম
লেসলি ও জন ব্রাউন দম্পতি দীর্ঘ ৯ বছর বিভিন্ন পদ্ধতিতে সন্তানধারণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে তাঁরা ওই তিন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে লেসলি জানতে পারেন, তিনি মা হতে যাচ্ছেন। ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের ওল্ডহ্যাম জেনারেল হাসপাতালে জন্ম নেন লুইস ব্রাউন। এই ঘটনাটি পরে বহু নিঃসন্তান দম্পতির জীবনে আনন্দ এনে দেয়।
### কেন পালাতে হয়েছিল লুইসের মাকে
প্রথমবার ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। গণমাধ্যম লেসলিকে অনুসরণ করতে থাকে, এবং পাপারাজ্জিরা বাড়ির সামনে ক্যামেরা তাক করে থাকেন। লেসলি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে প্যাট্রিক স্টেপটো রাতের অন্ধকারে নিজে গাড়ি চালিয়ে লেসলিকে নিয়ে তাঁর মায়ের কাছে রেখে আসেন। সন্তান জন্মের আগ পর্যন্ত বাইরের কেউ জানত না লেসলি কোথায় ছিলেন।
### পরবর্তীকালে কি হল?
লেসলির সিজারের প্রক্রিয়াটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। লুইসের জন্মের পর লেসলির মা-বাবা এবং চিকিৎসকেরা সংবাদ সম্মেলন করে সুখবর দেন। লুইস ব্রাউনের জন্ম নিয়ে অনেকেই কার্ড, ফুল ও উপহার পাঠিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান।
### তিন চিকিৎসকের বর্তমান অবস্থা
রবার্ট এডওয়ার্ড, প্যাট্রিক স্টেপটো এবং জন পার্ডি তিনজনই মৃত্যুবরণ করেছেন। সবার ছোট পার্ডি ১৯৮৫ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ত্বকের ক্যানসারে মারা যান। ১৯৮৮ সালে ৭৪ বছর বয়সে প্যাট্রিক স্টেপটো ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। রবার্ট এডওয়ার্ড ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। ২০১০ সালে তাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
### বর্তমান লুইস ব্রাউন
লুইস ব্রাউন বর্তমানে পরিবেশবিষয়ক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং টেস্টটিউবের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের একজন দূত হিসেবে কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে নিঃসন্তান দম্পতিদের অনুপ্রাণিত করতে বক্তব্য দেন। লুইস ব্রাউন একটি বইও লিখেছেন: ‘লুইস ব্রাউন: মাই লাইফ অ্যাজ দ্য ওয়ার্ল্ডস ফার্স্ট টেস্টটিউব বেবি’। লুইস ব্রাউন বর্তমানে দুই সন্তানের মা এবং সুখী জীবনযাপন করছেন।
লুইস ব্রাউন নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি আমার মা-বাবা আর চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমাকে জীবন দেওয়ার জন্য। জীবন সুন্দর।”