পিঠাপিঠি ভাইবোনের বোঝাপড়া সাধারণত বেশ ভালো হয়। একসঙ্গে বেড়ে ওঠার ফলে তারা একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে। তবে এর বিপরীত দিকও আছে, যেটি হলো কাছাকাছি বয়সের দুই সন্তানের লালনপালনে অভিভাবকদের উপর চাপ পড়া।আধুনিক জীবনের একক পরিবারে একই সঙ্গে দুটি ছোট শিশুকে বড় করতে গিয়ে অভিভাবকদের কষ্ট হতে পারে। মায়ের উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। তাই, সবদিক বিবেচনায় দ্বিতীয় সন্তান ধারণের সঠিক সময় কোনটি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সন্তানের জন্মের ন্যূনতম দুই বছর ব্যবধানে পরের সন্তান নেওয়া উচিত। মায়ের শারীরিক সুস্থতা ও শিশুর বেড়ে ওঠার পথে সার্বিক যত্ন নিশ্চিত করতে এই দুই বছরের ব্যবধান রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
একটি শিশুর দুই বছর বয়স অবধি মায়ের দুধ প্রয়োজন। এই সময়ের আগে মা পুনরায় গর্ভধারণ করলে শিশুটি পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাই পরবর্তী সন্তান নেওয়ার জন্য অন্তত দুই থেকে পাঁচ বছর সময় নেওয়া উচিত।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ বলছেন, মায়ের বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। প্রথমবার সন্তান ধারণের সময় যদি মায়ের বয়স ৩০ পেরিয়ে যায়, তাহলে ৩ বছরের মধ্যেই পরবর্তী সন্তান গ্রহণের পরিকল্পনা করা উচিত। কারণ, এরপর নারীর সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমতে থাকে এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ে।
দুই থেকে তিন বছরের ব্যবধানে দুই সন্তানের জন্ম হলে মা-বাবার জন্য তাদের দেখভাল করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে বাড়ন্ত বয়সে অভিভাবকের আদর-যত্নের ঘাটতি শিশুর উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বরং দুই সন্তানের মধ্যে কিছু ব্যবধান থাকলে মা-বাবার জন্য তাদের যত্ন নেওয়া তুলনামূলক সহজ হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জসিম উদ্দীন বলেন, শৈশবে মা-বাবার আদর-ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি থাকলে শিশুর মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, প্রথম সন্তান একটু বড় হলে তারপর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। যদি মায়ের শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকে, তবে পাঁচ বছর বা তার বেশি ব্যবধানও ক্ষতিকর নয়।
পরবর্তী সন্তান গর্ভে আসার পর বড় সন্তানকে একটু একটু করে তার অনাগত ভাই বা বোন সম্পর্কে জানাতে হবে এবং বুঝিয়ে দিতে হবে দুজনের জন্য মা-বাবার ভালোবাসা সমান। এতে সে সাদরে গ্রহণ করতে এবং ছোট ছোট আত্মত্যাগ করতেও প্রস্তুত থাকবে।