দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২২:৩১

আইন বিষয়ে পড়াশোনা নিয়ে ৫টি ভুল ধারণা

আইন বিষয়ে পড়াশোনা এবং এই পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে অনেকের মনেই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকদের মতামত নিয়ে তুলে ধরা হলো এমন পাঁচটি ভুল ধারণা এবং বাস্তব চিত্র।

### **১. তর্কপ্রিয় না হলে আইন পড়া বৃথা**

আইনের শিক্ষার্থীরা তর্কপ্রিয় হন—এটি একটি প্রচলিত ধারণা। তবে বাস্তবতা হলো, তর্কের চেয়ে যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আইনের মূল উদ্দেশ্য সঠিক তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে বাস্তব সমস্যার সমাধান করা। ধৈর্য সহকারে শুনে যুক্তি দাঁড় করানোর দক্ষতা আইন শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য। তাই তর্কপ্রিয় না হলেও আইন পড়া অপ্রাসঙ্গিক নয়।

 

**মাকসুদা সরকার**, সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস

 

 

### **২. আইন পড়া মানেই মুখস্থ করা**

আইন পড়া মানেই মুখস্থবিদ্যা—এ ধারণা পুরোপুরি ভুল। আইন শেখার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আইন বিশ্লেষণ করা এবং বাস্তবে প্রয়োগ করা। আদালতের রায়, নতুন আইন বা বিধিমালা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, যা মুখস্থ করা অসম্ভব। বরং শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা এবং বাস্তব সমস্যায় আইন প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করাই আইন শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।

 

**মো. জাহিদ-আল-মামুন**, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

### **৩. আইন পড়া মানেই আদালতে কাজ**

অনেকে মনে করেন, আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে শুধু আদালতেই কাজ করতে হবে। তবে এই ধারণা সঠিক নয়। আইন পেশার পরিধি অনেক বিস্তৃত। আইন পড়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া যায়। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, মানবাধিকার সংস্থা, এবং এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার সুযোগও রয়েছে। আইন শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও অপরিসীম।

 

**তকি আশরাফ**, প্রভাষক, আইন বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

 

 

### **৪. ব্যারিস্টার মানেই বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত আইনজীবী**

বার অ্যাট ল ডিগ্রি অর্জন করে একজন ব্যক্তি ইংল্যান্ডে আইন প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে বাংলাদেশে কাজ করতে হলে অন্যদের মতোই বার কাউন্সিল অ্যাডভোকেটশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ব্যারিস্টারদেরও দেশীয় আইনের জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তারা কর্পোরেট আইন বা চুক্তি আইনের মতো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠেন, তবে দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি ডিগ্রির চেয়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ওপর বেশি নির্ভর করে।

 

**আলী মাশরাফ**, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

### **৫. আইন পেশায় নারীদের সুযোগ কম**

আইন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত—এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আদালতে এবং অন্যান্য আইনসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নারীরা ক্রমাগত প্রভাব বিস্তার করছেন। বিচারক, আইনজীবী এবং শিক্ষক হিসেবে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাছাড়া, আইন পেশার সময়সূচি তুলনামূলক নমনীয় হওয়ায় অনেক নারী পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হন।

 

**নাজিফা মুনিয়াত কাদের**, প্রভাষক, আইন বিভাগ, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

 

 

আইন পেশা শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে। এসব ভুল ধারণা দূর করে আইন নিয়ে পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার গড়তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ