শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে বর্তমানে অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে রাত জেগে থাকার প্রবণতা অনেক বেশি। বড়রা প্রায়ই অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগেরই নির্দিষ্ট ঘুমের সময় নেই, তারা গভীর রাতে ঘুমাতে যান এবং অনেকের ঘুম আসতে আসতে ভোর হয়ে যায়। ঘুমের সমস্যা নিয়ে একটি সাধারণ ধারণা হলো, মুঠোফোনের ব্লু লাইট বা নীল আলো এর জন্য দায়ী। তবে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন।
তারা বলছেন, শুধুমাত্র স্মার্টফোনের ব্লু লাইটের কারণে আমাদের ঘুমে সমস্যা হয়, এমন ধারণা সঠিক নয়। গবেষকদের মতে, প্রযুক্তি থেকে নির্গত আলোর প্রভাব ঘুমের ওপর রয়েছে, তবে শুধুমাত্র নীল আলোই দায়ী নয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কাডিয়ান নিউরোসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট পিয়ারসন জানান, “ঘুম একটি জটিল প্রক্রিয়া,” এবং “চোখের রিসেপ্টরগুলো আমাদের মস্তিষ্কে জেগে থাকার সংকেত পাঠায়।” তিনি বলেন, রিসেপ্টরগুলো শুধুমাত্র নীল আলো শোষণ করে না, বরং লাল আলো শোষণ করেও সতর্ক হয়। আসল বিষয় হলো, কোন আলোর রঙ নয়, বরং সেই আলোর উজ্জ্বলতা এবং কত সময় ধরে তা আমাদের চোখে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্মার্টফোনের আলোর তুলনায় সূর্যের আলো এক হাজার গুণ বেশি উজ্জ্বল এবং ঘরের সাধারণ আলো প্রায় ১০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। তাই রাতে ঘরের উজ্জ্বল আলো নিভিয়ে দিলে ঘুম সহজেই আসতে পারে।
অধ্যাপক পিয়ারসন বলেন, স্মার্টফোনের নীল আলো ঘুমে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, তবে তা বেশ ক্ষীণ হয়। তবে যদি আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং ঘুমের সমস্যা থাকে, তবে এর প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় চার ঘণ্টা ই-রিডার পড়ার পরও ঘুমের ওপর তার প্রভাব ছিল সামান্য; সবার ঘুমে গড়ে ১০ মিনিট দেরি হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সমস্যা ঠেকাতে ব্লু লাইট চশমা কেনার পরিবর্তে, মাঝারি উজ্জ্বলতায় স্ক্রিন ব্যবহার এবং স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।