দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২২:৪৩

কক্সবাজারের মতো সুন্দর একটি জায়গা যেন অনাদরে পড়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ তখন উত্তাল, মিটিং, মিছিল, আন্দোলনে পুরো দেশ ঢেকে গেছে। এমনই এক সময়ে আমি কক্সবাজারে বিশেষ কাজে গিয়েছিলাম। গিয়েছিলাম, কাজও করলাম, কিন্তু ফেরার সময়টা পেছাতে হল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন চরমে, এবং কারফিউও জারি হয়েছিল। আমরা উঠেছিলাম ওশান প্যারাডাইস হোটেলে, যেখানে আগেও কয়েকবার এসেছি। তবে এবারের অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম। হোটেলের লিফট, বিচ, রেস্টুরেন্ট—প্রতিটি জায়গায় সবার চোখেমুখে ছিল এক ধরনের উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তা। যারা ঢাকায় ফিরতে পেরেছিল কিংবা যারা পারেনি, সবাই একে অপরকে প্রশ্ন করছিল:

 

“টিকিট পেয়েছেন?”

“আমরা যাচ্ছি।”

“ভালো থাকবেন।”

“দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে পৌঁছাই।”

 

এমন সাধারণ কথাও, তখনকার পরিস্থিতিতে, যেন এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরি করেছিল, মনে হচ্ছিল সবাই যেন পরিচিত। হোটেলের সামনে কিছু অটোচালক অপেক্ষা করছিল, যাত্রীর জন্য। তাদের মধ্যে রেদোয়ান নামক একজনকে ঠিক করলাম। হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত একটা ছেলে। একদিন আমাদের নিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর, দেখিয়েছিল এমন কিছু জায়গা, যা আগে কখনো দেখিনি। তার সঙ্গেই গেলাম দরিয়ানগর। নামটা যেমন সুন্দর, স্পটটাও তেমন। পুরোনো একটি গুহা, যা দেখলে অবাক হতে হয়। এমন সুন্দর জায়গা অথচ অযত্নে পড়ে রয়েছে! যদি একটু যত্ন নেয়া হত, তাহলে কত পর্যটক আসতে পারত সহজেই।

 

তবে গুহায় যাওয়ার আগে একটু ভয় লাগছিল, বিশেষ করে বিকেলের কাছাকাছি সময়ে। নির্জন জায়গা, আর আমরা দুজন। তবে কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখি এক মা তার শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে, এবং কয়েকজন লোক তাদের সঙ্গী হয়ে গুহার দিকে আসছে। তখন ভয়টা কাটল। রেদোয়ান ছিল খুব উৎসাহিত, কিন্তু জায়গার পরিবেশ এমন যে, সন্ধ্যা নামার আগেই একটু ভয় তো লাগবেই। গুহায় ঢোকার পর, মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ের ফাঁকে সূর্যের আলো ঢুকে এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, পায়ের নিচ দিয়ে চলছিল ঠান্ডা পানি। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরঝর করে পড়ছিল বৃষ্টির পানি, আর শেওলা-ভরা পাহাড়ের গা ছিল অদ্ভুত সুন্দর।

 

সে সময়গুলোতে আমরা প্রতিদিন কয়েকবার বিচে গিয়েছিলাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুটি সিটে বসে কাটিয়েছি। পাশের সিটে বসা মানুষগুলোরও মুখে ছিল চিন্তা, দেশের কী হবে, সবাই কীভাবে ফিরে যাবে?

 

চেনা ছিল না কেউ, তবে কথাবার্তায় ছিল এক ধরনের পরিচিতি, যেন সবাই এক পরিবারের অংশ। সেই সময়ের আলাপ, সহানুভূতি, মনের মধ্যে গেঁথে গেছে।

 

শেষে আমরা ঢাকা ফিরে এলাম, কিন্তু কক্সবাজারের সেই স্মৃতি, সেই হোটেল, রেদোয়ান, গুহা, এবং বিচের ঢেউগুলো মনের মণিকোঠায় রয়ে গেল।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ