দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:৫৫

ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পাওয়া ছবিটি যেভাবে তুলেছি

**‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পাওয়া ছবিটি যেভাবে তুলেছি**

 

বিগত এক বছরে যে মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দি করেছি, তার মধ্যে এই ছবিটি সবথেকে স্মরণীয়। ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলো যে ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল, সেখানে সাড়া দিয়েছিল বহু পাঠক। বিচারকদের দৃষ্টিতে আমার তোলা ছবিটি প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। একই প্রতিযোগিতার ভিডিও বিভাগে আমি দ্বিতীয় স্থানও অর্জন করেছি।

 

৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মধুবাগ থেকে বের হয়ে রিকশায় শাহবাগ যাচ্ছিলাম। পথে হাতিরঝিল হয়ে কারওয়ান বাজারে এসে দেখি, পুরো এলাকা পুলিশের দখলে। সেসময় সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলও। কিন্তু যখন আমি বাংলামোটরের দিকে এগিয়ে গেলাম, সেখানেই ছাত্র-জনতার অবস্থান দেখলাম। ছবি তুলতে তুলতে আমি শাহবাগ চলে আসি।

 

ঠিক তখনই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো শাহবাগ। ছাত্রদের এক দল সাংবাদিকদের ফুল দিচ্ছিল। আমি ক্যামেরা নিয়ে সেই মুহূর্তটি তুলে নিই। হঠাৎ করেই খবর আসে, বাংলামোটরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আসছে এবং ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। এই খবর শুনে শাহবাগ থেকে ছাত্ররা বাংলামোটরের দিকে হাঁটতে শুরু করে।

 

আমি তাদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে দেখি, গুলিবিদ্ধ কয়েকজন মানুষকে রিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলামটর আসতেই দেখি, ছাত্র-জনতা পিছু হটিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আবার পিছু হটতে থাকে, তবে তাদের পিছু-পিছু কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছিল। ঘটনাটি তখন রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

 

বিকেল ৪টার দিকে, আমি যখন কারওয়ান বাজারের কাছাকাছি পৌঁছাই, আন্দোলনকারীরা টিন, রাস্তার প্লাস্টিক ডিভাইডার, খালি পানির জার দিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছিল। একসময় এক আন্দোলনকারী পুলিশদের সামনে দাঁড়িয়ে এক হাতে ঢেউটিন, আরেক হাতে ইটের টুকরো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে দেখে তিনি ছাত্র-জনতাকে একসাথে এগিয়ে আসতে আহ্বান করছিলেন। এই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করা ছিল আমার জন্য একটি অভূতপূর্ব অনুভূতি। ছবিটি পরবর্তীতে প্রথম আলো’র প্রতিযোগিতায় সেরা ছবি হিসেবে নির্বাচিত হয়।

 

এছাড়া সেই দিন কারওয়ান বাজারের বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজও আমি তুলেছিলাম, যা ভিডিও শাখায় দ্বিতীয় সেরা পুরস্কার লাভ করেছে।

 

**আম্মার দানে শুরু**

 

ফটোগ্রাফি আমার আগ্রহের বিষয়। কলেজে পড়ার সময় থেকে ক্যামেরার সাথে পরিচিতি। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অনার্স পড়াকালে বিভিন্ন সময় বন্ধুদের ক্যামেরা ধার করে ছবি তুলতাম। ২০১৬ সালে আম্মা আমাকে নিজের ক্যামেরা কিনে দেন। এরপর থেকে আমার এই যাত্রা শুরু হয়।

 

পছন্দের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতাম, আর সেখান থেকেই এক বড় ভাই আমাকে মেসেজ করে জানতে চান, আমি তাঁর সাথে কাজ করতে চাই কি না। ঢাকায় আসার পর ২০১৯ সালে বিভিন্ন ওয়েডিং ফটোগ্রাফির কাজ শুরু করি।

 

তবে শুধু বিয়ের ছবি নয়, আন্দোলন এবং প্রতিবাদের ছবি তুলতেও আমি ভুলিনি। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছবিও তুলেছিলাম। এবারও ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমি মাঠে ছিলাম, ছবি এবং ভিডিও তোলার জন্য।

 

এই পুরস্কার আসলে আমার জন্য এক বিশাল আনন্দের বিষয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, যে মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দি করেছি, তার মধ্যে অনেক কিছু শিখেছি—যেভাবে প্রতিবাদ, আন্দোলন এবং প্রতিবন্ধকতাকে ছবি দিয়ে বর্ণনা করা যায়, তাও আমার জন্য ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট