এই ছবিটি একটি করলার ফুলের। করলা আমাদের দেশের এক পরিচিত সবজি হলেও, এর ফুল ও পাতাগুলো যেন বেশিরভাগ মানুষের চোখের আড়ালেই থাকে। করলা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, পটোলের মতো সবজির চাষের জন্য নির্দিষ্ট মাটি ও আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাই আমাদের আশপাশে বা সাধারণত ছাদে-বারান্দায় এদের বিস্তৃত ফলন দেখা যায় না।যদিও বর্তমানে ছাদ ও বারান্দায় বিভিন্ন সবজি ফলানো সম্ভব, তবুও করলার ফুলের সাথে আমার প্রথম দেখা কবে হয়েছিল মনে নেই। তবে, করলা গাছ বা ফুল দেখলে আমার মধ্যে এক ধরনের সৃজনশীল ভালো লাগা জন্ম নেয়, যেন কিছু অসাধারণ অর্জন করতে যাচ্ছি।
অনেক বড় বয়সে এক স্বজনের বাগানে চিচিঙ্গা ফুল ও ফল ঝুলতে দেখে যে একধরনের অপরিচিত আনন্দ পেয়েছিলাম, তা আর কখনো ম্লান হয়নি। যেকোনো সুন্দর মুহূর্ত যেমন প্রথমবারের মতো অনুভব করি, সেই আনন্দের অনুভূতি ফিরে আসে চিচিঙ্গা গাছ দেখলেও।
এমন প্রাকৃতিক সজীবতা আমাদের সকলের মনে শৈশবের নির্ভার কল্পনাগুলোর মতো আনন্দ দেয়। ইচ্ছে করে, যদি এই সুখানুভূতি আরও অনেকের সাথে ভাগ করে নিতে পারতাম! যারা ভাবে সুখী হতে অনেক কিছু লাগে কিংবা অন্যকে হারিয়ে জিততে হয়, তাদের জন্য প্রকৃতির এসব সৌন্দর্য যেন সত্যের একটি নিঃশব্দ শিক্ষা।
আমার মনে হয়, এইসব অনুভূতি অনেকের মধ্যেই বাস করে। যারা অনুভব করে না, তাদের চিন্তাধারা বদলে দিতেই হয়তো আমার লেখাগুলো আসে। মিথ্যার সামনে একটুকরো সত্যের প্রদর্শন যতই কঠিন হোক, সত্য নিজের জায়গায় অটল থাকে। করলায় যেমন ঔষধি গুণ আছে, ঠিক তেমনি মানুষের সৎ কাজেও থাকে মঙ্গলময় উদ্দেশ্য।
জীবনের অগণিত স্মৃতির ভাঁজে আমাদের কত রকমের অভিজ্ঞতা জমা হয়! ঠিক যেমন করলা রান্নার সাথে আমাদের টক-মিষ্টি-তেতো স্মৃতিগুলো মিশে থাকে। প্রতিটি ব্যথার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আলোর জন্ম। আমরা যদি করলার মতো গুণে ভরপুর মানুষ হতে পারি, এই পৃথিবীতে কি আর যুদ্ধ বা ওষুধের প্রয়োজন থাকবে? প্রতিদিন একটু একটু করে ভালো কাজ জমা করলেই আমাদের জীবনের অর্থপূর্ণ সংগ্রহ তৈরি হবে।
মানুষের সুখ, দুঃখ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা এগুলোও যত্নের সাথে সঞ্চয় করলে তা এক একটি মূল্যবান রত্ন হয়ে ওঠে। সত্যের পথে পরাজয় বলে কিছু নেই। যারা বিশ্বাস করতে পারেন না, তারা একটানা চেষ্টা করেই দেখুন, দেখবেন পৃথিবীর কোনো না-পাওয়া আপনাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না।