সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ কখনোই দুঃস্বপ্নেও প্রিয়জনদের বিপদে ফেলে চিন্তা করতে পারেন না। তবে জানলে অবাক হবেন, কিছু মানুষ জেগে থেকেও তাঁদের কাছের মানুষদের বিপদ বা দুর্ঘটনার দৃশ্য কল্পনা করেন। এটি তাঁদের জন্য সময় কাটানোর মতোই একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে এটি কেবল কল্পনা নয়, বরং এক ধরনের দিবাস্বপ্ন—তবে অস্বাভাবিক মাত্রার। এই সমস্যাটিকে বলা হয় ম্যালঅ্যাডাপটিভ ডেড্রিমিং। এই অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্ন কখনো কখনো এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, এর মধ্যে যা যা ভাবছেন বা করছেন, বাস্তবেও তা করতে বা বলতে পারেন। এমনকি, স্বপ্নের জগতের ঘটনাগুলো তাঁর মুখভঙ্গিতেও ফুটে উঠতে পারে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, যদি এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে, তবে তা অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্নের লক্ষণ।
### অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্নের ভেতর কী ঘটে?
এই ধরনের দিবাস্বপ্নে নানা রকম কল্পিত ঘটনা ঘটতে পারে, যার মধ্যে প্রিয়জনের বিপদের চিন্তা বা ফ্যান্টাসিও থাকতে পারে। মনে হয় যেন সবকিছু চোখের সামনেই ঘটছে। এমনও হতে পারে যে, বাস্তব পরিস্থিতি ভুলে গিয়ে কল্পনার জগতে মগ্ন হয়ে পড়েন। হয়তো তিনি একা আছেন, তবুও কল্পনায় চরিত্রদের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো মানুষ সামনেই থাকলেও তাঁকে চিনতে বা স্বাভাবিক আচরণ করতে অসুবিধা হতে পারে।
### কেন এই ধরনের অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্ন হয়?
যাঁরা মানসিক আঘাত, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা বা মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের চিন্তায় বিশৃঙ্খলা আসতে পারে এবং এ ধরনের অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্ন দেখা দিতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট দৃশ্য, বস্তু বা গন্ধের সংস্পর্শে এলে তাঁরা এই স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করতে পারেন, যা তাঁদের অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
### অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্নের প্রভাব
অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্ন জীবনযাপনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মনোযোগের অভাব, ঘুমের ব্যাঘাত, সামাজিক সম্পর্কের অবনতি, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশপাশের মানুষ তাঁকে অস্বাভাবিক মনে করতে পারেন, যদিও তাঁর জন্য এটি নেশার মতো হয়ে ওঠে। তিনি নেতিবাচক দিবাস্বপ্ন না দেখলে অস্বস্তি অনুভব করেন।
### আপনজনদের করণীয়
আপনার পরিচিত কেউ যদি অস্বাভাবিক দিবাস্বপ্নে ভুগে থাকেন, তবে তাঁকে সহায়তা করা জরুরি। কারণ তিনি নিজে এই সমস্যাটির অস্বাভাবিকতা উপলব্ধি করতে পারেন না। এ সময় মানসিক সমর্থন, রাতে ঘুম ঠিক রাখা, দিনের বেলা সূর্যের আলোতে থাকা এবং সমস্যা বাড়ায় এমন বস্তু বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সহায়ক হতে পারে। চা-কফি এড়িয়ে চলা, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, এই বিষয়গুলোতে সহায়তা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া মানসিক চিকিৎসা গ্রহণে তাঁকে উৎসাহিত করতে পরিবারের সদস্যদেরই ভূমিকা নিতে হবে।