মার্কিন লেখিকা কেট শপ্যাঁ তাঁর বই ‘দ্য অ্যাওয়েকেনিং’-এ বলেছেন, সমুদ্র আমাদের আত্মার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। আশপাশের যেকোনো ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তিকে প্রিয় গন্তব্য জিজ্ঞাসা করলে দেখা যাবে, বেশির ভাগের তালিকার শীর্ষে থাকে সমুদ্র। কখনো ভেবেছেন, কেন আমরা শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে বারবার ছুটে যাই সমুদ্রের কাছে? সমুদ্রের লোনাজল, ঢেউয়ের শব্দ, সাগরতটের হিম বাতাস আমাদের মনে এক প্রশান্তি নিয়ে আসে। তবে, এটি কি শুধু সমুদ্রেই পাওয়া যায়? ভাবুন ছোটবেলায় পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি বা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার মুহূর্তগুলোর কথা। যেকোনো জলাশয়ের কাছাকাছি থাকলে মনে প্রশান্তি আসে। বিজ্ঞানও বলে, পানি বা জলাশয়ের কাছে থাকা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ধারণাই ব্লু মাইন্ড থিওরি নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের জীববিজ্ঞানী ড. ওয়ালেস নিকোলস তাঁর বিখ্যাত বই ‘ব্লু মাইন্ড’-এ এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
### ব্লু মাইন্ড থিওরি কী?
‘ব্লু মাইন্ড’ বইয়ে নিকোলাস বলেন, পানির কাছাকাছি থাকা, পানিতে সময় কাটানো বা ডুব দেওয়া আমাদের মনে ধ্যানের মতো একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করে। এতে মস্তিষ্কে শিথিল অবস্থা তৈরি হয়, ফলে আমরা এক ধরনের মেডিটেটিভ স্টেটে চলে যাই, যা চাপ কমাতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং সৃজনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পানির কাছাকাছি থাকলে মানসিক চাপ কমে যায় এবং মনে শান্তি আসে। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে ও চাপ কমাতে পানির কাছে থাকতে পরামর্শ দেন, হতে পারে তা সমুদ্র ভ্রমণ বা জলাশয়ে সাঁতার কাটা।
### বর্তমান যুগে ব্লু মাইন্ড থিওরি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্লু মাইন্ড থিওরির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। টিকটক বা ইনস্টাগ্রামে সমুদ্রভ্রমণ, পানিতে দাপাদাপি বা ভেসে থাকার ভিডিও ক্রমাগত ভাইরাল হচ্ছে। অনেক সাঁতারু ও ডুবুরি তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যাঁরা অবসর কাটাতে বা বিনোদনের জন্য পানিসংক্রান্ত কার্যকলাপে অংশ নেন, তাঁদের মানসিক সন্তুষ্টি বহুগুণে বাড়ে।
### ব্লু মাইন্ড থিওরির ব্যবহার
এই থিওরি কি শুধু বড় জলাশয়েই কার্যকর? যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক এলিজাবেথ ট্রাটনার বলেন, এটি শুধু বড় জলাশয়ে নয়, ছোট ফোয়ারা বা অ্যাকুয়ারিয়ামেও কার্যকর হতে পারে। চিকিৎসকেরা ব্লু মাইন্ড থিওরি রোগীদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যবহার করেন। তাঁরা বলেন, এটি চাপ কমানো ছাড়াও মনকে প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক কার্যকলাপে উৎসাহিত করে।
ব্লু মাইন্ড থিওরির ওপর ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পানিনির্ভর চিকিৎসাপদ্ধতিও তৈরি হয়েছে। যেমন মালদ্বীপের ওয়াটসু থেরাপি, যেখানে মানুষ উষ্ণ পানিতে ভেসে মালিশ ও শিথিলকরণের অভিজ্ঞতা পায়। কেউ কেউ এটিকে মাতৃগর্ভে থাকার অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করেন। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টেও জানজু থেরাপি নামে পানির বিশেষ থেরাপি প্রচলিত রয়েছে।
### ব্লু মাইন্ড থিওরির জনপ্রিয়তার কারণ
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে মানুষের মানসিক চাপ অনেক বেশি। এই চাপ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ছে, তাই পানিনির্ভর চিকিৎসার চাহিদা বাড়ছে। অনেকেই সমুদ্রে ডাইভিং, স্নরকেলিং বা সাঁতার কেটে মানসিক শান্তি খুঁজে পান। সুতরাং, যদি মানসিক চাপ অনুভব করেন, বিজ্ঞানের দোহাই দিয়েই ঘুরে আসতে পারেন সমুদ্রপাড়ে।