ঢাকার আব্দুল্লাহ রাফী মানুষের সেবা করার ইচ্ছা থেকেই কেয়ারগিভার বা পরিচর্যাকারীর পেশা বেছে নিয়েছেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে যত্ন নেন তিনি। কেয়ারগিভার রাফীর গল্প শোনালেন সজীব মিয়া:প্রতিদিন ভোরে রাফীর দিন শুরু হয়। যখন পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তিনি কাজের জন্য তৈরি হন। বনানী টিঅ্যান্ডটি কলোনির বাসা থেকে নাশতা করে বের হয়ে যান। ইদানীং তাঁর গন্তব্য ধানমন্ডির একটি বাড়ি।
ওই বাড়ির এক বৃদ্ধ প্রতিদিন সকাল আটটার মধ্যে রাফীর জন্য অপেক্ষা করেন। রাফী সেখানে পৌঁছালে তাঁর দিন শুরু হয়। প্রথমে রাফী তাঁকে বিছানা থেকে উঠিয়ে বাথরুমে নিয়ে যান, দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেন এবং নাশতার টেবিলে নিয়ে যান। তবে তাঁর খাবারে আগ্রহ কম, তাই নানা কথা বলে বুঝিয়ে খাওয়াতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় ওষুধ তুলে দেন তাঁর মুখে, রক্তচাপ মাপা থেকে শুরু করে অন্যান্য শারীরিক তথ্য নিয়মিতভাবে পরিবারের সদস্য ও ডাক্তারদের জানান।
সকালের কাজ শেষে তাঁকে নিয়ে ঘরে ফেরেন রাফী। পত্রিকা পড়ে শোনান এবং বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানান। এভাবেই সারাদিন তাঁর দেখভাল চলে। রাফী জানান, এমন অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা দেওয়া তাঁর কাজ ও পেশা, যা তিনি মন থেকেই করেন। গত চার বছরে এ ধরনের ১৫ জনকে সেবা দিয়েছেন। অনেকে সুস্থ হয়ে নিজের কাজ করতে পারলে রাফীর দিনটি বিশেষ আনন্দের হয়ে ওঠে।
বর্তমানে রাফীর পরিচর্যায় থাকা প্রায় ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তাঁর সন্তানেরা কাজে ব্যস্ত, কেউ কেউ দেশের বাইরে, তাই সশরীরে যত্ন নিতে পারেন না। বছরের শুরুতে এই পরিবারের সদস্যরা রাফীর প্রতিষ্ঠান হোম অ্যান্ড কমিউনিটি কেয়ার লিমিটেডের (এইচসিসিএল) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেবার দায়িত্ব পাওয়ার পর রাফী ধীরে ধীরে বৃদ্ধের সঙ্গে দাদা-নাতির সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এখন বৃদ্ধ তাঁর কথাই শুনে চলেন।
প্রতিদিন সাড়ে ১০টার দিকে বৃদ্ধ ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় রাফী নিজের কাজগুলো সেরে নেন। দুপুরে তাঁকে গোসল করিয়ে, চিকিৎসকদের রিপোর্ট পাঠান, এবং বিকেল গড়িয়ে রাত পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে থাকেন। বিদায়ের সময় রাফীর চলে যাওয়ায় বৃদ্ধের মন খারাপ হয়, তাই ধীরে বলেন, “আইচ্ছা, যাও।”
মানুষের সেবা করার ইচ্ছা থেকেই এই কাজ বেছে নেওয়া রাফী প্রথমে সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠান এইচসিসিএলে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণে তাঁকে রোগীদের সঙ্গে আচরণ, শুশ্রূষা ও সেবার পদ্ধতি শেখানো হয়। এরপর তাঁকে হাসপাতালে হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানের লেভেল-১ কেয়ারগিভার, সেবায় আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছেন।
রাফীর মা-বাবা, স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান রয়েছে। প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরতে রাত ১০টা বেজে যায়। পরিবারের সঙ্গে সময় কম কাটলেও এসব নিয়ে তাঁর আক্ষেপ নেই। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি যাঁদের দেখার কেউ নেই, এমন মানুষকে সেবা দিয়ে প্রতিদিন নতুন করে শক্তি খুঁজে পান রাফী।