দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২০:৩১

বন্যার্তদের সাহায্যে রোবট নিয়ে এগিয়ে এলো একদল তরুণ

টিম অ্যাটলাসের সদস্যরা ছবি: সংগৃহীত

গাড়ি, নৌকা, কিংবা স্পিডবোট—কোনো যানবাহনই যখন বন্যাদুর্গত এলাকায় চলাচল করতে পারছে না, তখন তরুণদের কয়েকটি দল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছে দিচ্ছে। কীভাবে এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হলো, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

 

### নাবিক অটোমেশনস

 

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘নাবিক অটোমেশনস’ দল একটি জল-রোবট তৈরি করেছে, যার নাম ‘নাবিক’। ২৮ আগস্ট দলটি তাদের প্রাথমিক কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে। এই দলে আছেন আদিল হোসেন, ফারদিন খান, মাশরুজ্জামান, মো. সাকলাইন নেওয়াজ, ফারিয়ান শাহ ফাহী, ভুবন মজুমদার, মিফতাহুল জান্নাত, এবং আবু অহন রহমান।

 

দলের সদস্য আবু অহন রহমান বলেন, “ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র আদিল হোসেনের তত্ত্বাবধানে বর্তমান শিক্ষার্থী ফারদিন খান ও মাশরুজ্জামান দলটি গঠন করেন। সমুদ্রকেন্দ্রিক রোবোটিকস শিল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা একটি বহুজাতিক (বাংলাদেশ ও কানাডা) স্টার্টআপ হিসেবে যাত্রা শুরু করি। ভূমি ও ডুবোজলের রোবট নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ করার ফলে আমাদের এই ধরনের রোবট তৈরি ছিল।”

 

বন্যায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তাদের আগে হয়নি, তাই তারা এবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করতে চেয়েছিলেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রোবোটিকস ক্লাব তাদের যন্ত্রপাতি ও ল্যাব সুবিধা দিয়ে সহায়তা করেছে। ফেনী জেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের সিলোনিয়া বাজার এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করে নাবিক অটোমেশনস। দলনেতা ফারদিন খান জানান, “আমাদের রোবটটি প্রায় ৬০ কেজি ওজন বহন করতে পারে এবং দুই কিলোমিটার এলাকায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম। সরু পথ বা এমন জায়গায় যেখানে নৌকা যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে আমরা সফলভাবে ত্রাণ সরবরাহ করেছি।”

 

এই তরুণদের মতে, রোবটের মাধ্যমে কাজ করলে সময় ও ঝুঁকি দুটোই কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে দুর্গম এলাকায় আটকে পড়া মানুষের খোঁজ নেওয়াও সহজ হয়। নাবিক অটোমেশনস তাদের উদ্যোগকে আরও গতিশীল করার স্বপ্ন দেখছে।

 

### টিম অ্যাটলাস

 

টিম অ্যাটলাস নামের আরেকটি দল রোবটের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। দলটির সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস ও বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। দলের নেতা এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানি জুবায়ের বলেন, “বন্যার পর আমরা ১৫ দিন ধরে একটি রোবটের নকশা ও উন্নয়নের কাজ করছিলাম। প্রাথমিক ট্রায়ালের পর রোবটটি নিয়ে আমরা বন্যা এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকের মুঠোফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে, যা যোগাযোগের অন্যতম বাধা। তাই আমরা মুঠোফোনের চার্জের ব্যবস্থাও করেছি।”

 

টিম অ্যাটলাস ২৮ আগস্ট থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় জরুরি খাবার, পানি, স্যালাইন, ওষুধ এবং মুঠোফোনের চার্জ সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। দলের আরেক শাখা ‘কোড ব্ল্যাক’-এর দলনেতা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, “আমরা কুমিল্লায় কাজ করেছি এবং নির্দিষ্ট দুর্গম এলাকায় ত্রাণ ও মুঠোফোন চার্জিং সরঞ্জাম সফলভাবে সরবরাহ করেছি। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা রোবটটি আরও উন্নত করব।”

 

দলটির কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন নুসরাত জাহান, ইজহার হোসেন, মোস্তাকিম রহমান, জিয়া মোহাম্মাদ সায়েফ উল্যাহ, ত্রিশা পাল, এবং পাল বাড়ি।

 

এই তরুণদের প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে দুর্গম এলাকাতেও সহায়তা পৌঁছে দিতে পারে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ