দ্যা নিউ ভিশন

শিশুকে পরিবেশবান্ধব খেলনা দেওয়ার কারণ

### শিশুর শৈশবের স্মৃতি ও বব দ্য টাইনি টার্টেল

 

আমি যখন স্কুলে ভর্তি হলাম, তখন শীতের এক ছুটিতে নানুবাড়িতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম একটি জাদুর বাক্স। সেই সাধারণ দেখানো বাক্সের ঢাকনা খুললেই চোখে পড়ত নানা রঙ ও ডিজাইনের কাপড়। নানু সেগুলোতে তুলা ভর্তি করে দ্রুত পুতুল তৈরি করতেন! যদিও বার্বি কিংবা মিকি মাউসের মতো নিখুঁত ছিল না, কিন্তু এসব পুতুলে ছিল অজস্র মমতা ও স্বকীয়তার ছোঁয়া।

 

এবং সঙ্গে ছিল শৈশবের কত গল্প। হারিয়ে যাওয়া সেই গল্পগুলো আবার ফিরিয়ে এনেছে **বব দ্য টাইনি টার্টেল**। রংবেরঙের কাপড় ও তুলা দিয়ে তৈরি তাদের পরিবেশবান্ধব খেলনাগুলো আমাকে শৈশবে নিয়ে যায়।

 

বর্তমান সময়ে শিশুদের শৈশবের শুরু হয় বিদেশি চরিত্রের খেলনা ও পুতুল দিয়ে, যার বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর প্লাস্টিকের তৈরি। এ কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এবং এই খেলনাগুলো দ্রুত ভেঙে যায়, ফলে তাদের সঙ্গে গল্প তৈরি হওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ঠিক এ জায়গায় সচেতনতা তৈরির কাজে যুক্ত হয়েছে **বব দ্য টাইনি টার্টেল**। ২০২১ সালে করোনা-পরবর্তী সময়ে সিফাত আরা আজিমের উদ্যোগে শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠান।

 

সহপ্রতিষ্ঠাতা সিদরাতুল সাফায়েত ডানিয়ালও ছিলেন এ যাত্রায়। “বব” নামের প্রথম অংশ মানে “বেস্ট অব বেঙ্গলস”, আর “টাইনি টার্টেল” দিয়ে বোঝানো হয়েছে বড় পরিবর্তনের জন্য ছোট পদক্ষেপগুলো। বব দ্য টাইনি টার্টেলও সামাজিক পরিবর্তনের পেছনে একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, যদিও প্রয়াসটি বড়।

 

বাব দ্য টাইনি টার্টেলের খেলনাগুলো দেখতে এক নজরেই শিশুর মন কেড়ে নেবে। পরনে লাল-সবুজ শাড়ি ও খোঁপায় লাল পলাশ—মুক্তি যেন স্বাধীনতা, সাহস ও দেশাত্মবোধের প্রতীক। মুক্তি ছাড়াও রয়েছে বেঙ্গল টাইগার থেকে অনুপ্রাণিত **টিগি দ্য টাইনি টাইগ্রেস**, লম্বা চুলের **ববি খালা**, **বরকত খালু**, **রি অ্যান্ড পা**, **রেইনবো স্যান্টা** ইত্যাদি। এগুলোর কিছু রং চেনার জন্য এবং কিছু নৈতিক দিক থেকে শিক্ষণীয় পুতুল হিসেবে কাজ করে।

 

এতে বাংলার ঐতিহ্য ও দেশাত্মবোধ ফুটে উঠেছে। তাদের তৈরি হ্যান্ডমেইড ইকোটয় হিসেবে পরিচিত এই পুতুলগুলো স্থায়িত্বের দিক থেকেও এগিয়ে থাকবে। **বব দ্য টাইনি টার্টেল** লক্ষ্য করেছে শিশুদের জীবন শুরুর দিকেই ক্ষতিকর প্লাস্টিকের বর্জন করে মানসম্মত, পরিবেশবান্ধব পণ্য তুলে দেওয়া।

 

প্রতিষ্ঠানটি বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান ব্যবহার করে যতটা সম্ভব কম আবর্জনা উৎপাদন করে পুতুলগুলো তৈরি করছে। বিদেশে এই ধরনের পরিবেশবান্ধব খেলনার পরিচিতি আগে থেকে থাকলেও, বাংলাদেশে এ ধারণাটি নতুন। প্রতিষ্ঠাতা সিফাত আরা আজিম বলেন, “আমরা শিশুদের চোখ দিয়ে এই পৃথিবীকে দেখতে চাই। বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের চিন্তাশক্তি ও কর্মকাণ্ডে দ্রুততা এসেছে, ফলে তারা দ্রুত খেলনা কিনছে এবং দ্রুতই নষ্ট করে ফেলছে। এতে প্রচুর অপচনশীল প্লাস্টিক আবর্জনা তৈরি হচ্ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “শিশুদের জীবন শুরুর দিকে এসব খেলনা দেওয়ার ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে, এবং তারা ধীরস্থির হতে শিখছে না। অথচ এই সময়েই তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

 

বব দ্য টাইনি টার্টেলের একটি শোরুম বনানী শাখায় অবস্থিত। শিশুদের রঙিন পৃথিবীতে হারিয়ে যেতে চাইলে সেখানে একবার গিয়ে দেখা করতে পারেন।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ