দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২১:০৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধিপত্য: সংকুচিত হচ্ছে সৃজনশীল চাকরির সুযোগ

এআই কমিয়ে দিচ্ছে সৃজনশীল চাকরির বাজারসংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: সৃজনশীল চাকরির বাজার সংকুচিত হচ্ছে

জেনারেটিভ এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আগে অনেকের ধারণা ছিল যে, এটি শুধুমাত্র মানুষকে সৃজনশীল কাজে সহায়তা করবে, তবে কখনোই মানবকর্মীকে প্রতিস্থাপন করবে না। কিন্তু হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এআই শুধু সহায়ক নয়, বরং মানুষের কাজ দখল করে বাজারে চাকরির সুযোগ সংকুচিত করে দিচ্ছে। চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর থেকে লেখালেখির চাকরির সংখ্যা ৩০ শতাংশ এবং প্রোগ্রামিংয়ের চাকরি ২০ শতাংশ কমে গেছে। আর গত এক বছরে ডিজাইনারদের চাকরির বিজ্ঞপ্তিও ১৭ শতাংশ কমেছে। এই পরিবর্তনগুলো হঠাৎ ঘটে না; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর গতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

**লেখালেখির চাকরিতে সংকোচন**
চ্যাটজিপিটির আগমনের পর লেখালেখির কাজের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি মানব লেখক দিয়ে কাজ করার প্রবণতা কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সৃজনশীল লেখকরা আগের মতো কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চ্যাটজিপিটির মতো এআই সফটওয়্যার ব্যবহার করে লেখার খসড়া তৈরি, পর্যালোচনা ও কাঠামো তৈরি করছে, যা আগে মানব লেখকের কাজ ছিল। এআই দ্রুত ও কম খরচে কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম, ফলে লেখকদের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। ফ্রিল্যান্স লেখকদের জন্য এটি একটি বড় সংকট, কারণ তাদের কাজের সুযোগ কমে গেছে।

**প্রোগ্রামিং পেশায় সংকোচন**
প্রোগ্রামিং বা কোডিং-নির্ভর চাকরির ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে। হার্ভার্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য এআই প্রযুক্তির কারণে কোডিংয়ের চাকরি ২০ শতাংশ কমে গেছে। একসময় কোডিং ছিল একটি নিরাপদ পেশা, কিন্তু এখন এআই দ্রুত কোড লেখা, ত্রুটি সংশোধন এবং এমনকি সম্পূর্ণ অ্যাপ তৈরি করতে পারছে, যা আগে দক্ষ প্রোগ্রামারদের কাজ ছিল। এই কারণে কোডিং পেশায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে এবং চাকরির সুযোগ কমে গেছে।

**ডিজাইন পেশায় পরিবর্তন**
ডিজাইন ক্ষেত্রেও এআই তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। ডাল-ই-২ এবং মিডজার্নি মতো এআই টুলগুলোর সাহায্যে এখন উচ্চমানের ছবি এবং গ্রাফিক্স তৈরি করা সম্ভব, যা একসময় শুধুমাত্র সৃজনশীল ডিজাইনারদের কাজ ছিল। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই এআই টুল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় ছবি বা দৃশ্য তৈরি করে নিচ্ছে, ফলে ডিজাইনারদের চাহিদা কমে গেছে। গত এক বছরে ডিজাইনারদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি ১৭ শতাংশ কমেছে।

**চাকরির বাজারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি**
বিশেষজ্ঞদের মতে, জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির এ ধরনের প্রভাব শ্রমবাজারে নতুন এক শঙ্কা তৈরি করছে। এক সময় যেসব প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজারে প্রভাব ফেলতে কয়েক বছর বা এক দশক সময় নিত, বর্তমানে সেই প্রভাব অতি দ্রুত দেখা যাচ্ছে। হার্ভার্ডের গবেষণা স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, এআই এখন মানুষের প্রচলিত কাজের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করছে। যে কাজগুলো এক সময় সৃজনশীল ও জটিল মনে করা হতো, সেগুলোও এখন এআই সক্ষমভাবে করতে পারছে।

**নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ**
এই প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে মানিয়ে নিতে কর্মীদের এখন নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে নতুন ধরনের কাজের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সৃজনশীলতার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করা এবং নিজেদের প্রযুক্তির সঙ্গে আরও একত্রিত করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ