ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে দ্বিতীয় দফার ভোট পরিদর্শনে শ্রীনগরে পৌঁছেছেন ১৬ দেশের কূটনীতিকেরা।
নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিযুক্ত কূটনীতিকদের জন্য কাশ্মীর উপত্যকায় ভোটের প্রক্রিয়া দেখাতে নিয়ে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আজ বুধবার শ্রীনগরসহ আশপাশের কিছু ভোট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কেমন হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা নয়াদিল্লি ফিরবেন।
ভোট দেখতে উপত্যকায় গেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, গায়ানা, দক্ষিণ কোরিয়া, পানামা, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, তানজানিয়া, আলজেরিয়া এবং রুয়ান্ডার কূটনীতিকেরা।
শ্রীনগরে নেমে প্রথমেই কূটনীতিকেরা যান বদগাম কেন্দ্রে। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
এই প্রথম বিদেশি কূটনীতিকদের কাশ্মীরের ভোট দেখতে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এর আগে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখাতে বিদেশিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
শ্রীনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জি-২০ সম্মেলনও। কিন্তু ভোট দেখাতে কখনো ভারত সরকার বিদেশি কূটনীতিকদের কাশ্মীরে আমন্ত্রণ জানায়নি।
আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার দ্বিতীয় দফার ২৬ আসনের ভোট। আজই নির্ধারিত হবে এনসির ওমর আবদুল্লাহ, জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র রায়না, কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা, আপনি পার্টির সভাপতি আলতাফ বুখারির ভাগ্য। এই দফায় ভোট দেবেন ২৬ লাখ ভোটার। মোট প্রার্থীসংখ্যা ২৩৯।
ওমর আবদুল্লাহ এবার দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের খাসতালুক বলে পরিচিত গান্দারবাল ও বাদগাম থেকে। গান্দারবালে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিডিপির সম্পাদক বসির আহমেদ মীর। এখানে জেলবন্দী ধর্মপ্রচারক সরজান বরকতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে সমর্থন করছে জামায়াতে ইসলামি ও বারামুল্লার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদের দল আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি (এআইপি)। গত লোকসভা ভোটে বারামুল্লায় এই ইঞ্জিনিয়ার রশিদের কাছেই ওমর আবদুল্লাহ হেরেছিলেন দুই লাখের বেশি ভোটে। রশিদ তখন কারাবন্দী ছিলেন। এখনো কারাবন্দী। তবে আদালত তাঁকে ভোটে প্রচারের জন্য জামিন দিয়েছেন।
ওমর আবদুল্লাহর দ্বিতীয় আসনে (চানাপুরা) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিডিপি নেতা আগা সঈদ মুনতাজির মেহদি। চানাপুরা আসনেও লড়াই জমজমাট। এখান থেকে দাঁড়িয়েছেন আপনি পার্টির নেতা আলতাফ বুখারি। তাঁকে শক্ত লড়াইয়ের মুখে ফেলেছেন এনসির ব্যবসায়ী নেতা মুস্তাক গুরু, পিডিপির মহম্মদ ইকবাল টুমব্রু ও বিজেপির হিলাল আহদেন ওয়ানি।
আজ সকাল থেকে শুরু হওয়া ভোটে উদ্দীপনা প্রবল। এবারের ভোট ঘিরে এত আগ্রহ আগে দেখা যায়নি। এত প্রার্থীর সমারোহও আগে দৃশ্যমান ছিল না।
ভোটের প্রচারে কোনো জায়গা থেকে কোনো রকম বাধা-বিপত্তির খবর পাওয়া যায়নি। জম্মু এলাকার পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গিরা কারও কোনো প্রচারে বাধা দেয়নি।
এই প্রথম ভোট বয়কটের নিদানও শোনা গেল না। যে জামায়াতে ইসলামি এতকাল হুরিয়ৎ কনফারেন্সের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে এসেছে, তারাই এবার কেন্দ্রীয় সরকারের মদদে ভোটে লড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
তবে বিতর্ক যে একেবারেই নেই, তা নয়। সেই বিতর্ক ভোট দেখতে বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে।
ওমর আবদুল্লাহ সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘এই সরকার চিরকাল বলে এসেছে জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে কাউকে নাক গলাতে দেবে না। বিদেশিরা নানা সময় এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। প্রতিবারই সরকার তাঁদের অনভিপ্রেত চর্চা না করার উপদেশ দিয়েছে। সেই সরকার এখন বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে আসছে ভোট দেখাতে। গাইডেড ট্যুর। এখন এই কূটনীতিকেরাই যদি পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের অপছন্দের মন্তব্য করেন, তা হলে কী জবাব দেওয়া হবে?’
ওমর আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘সরকার বিদেশের কূটনীতিকদের ডেকে আনছে, অথচ বিদেশি সাংবাদিকদের আসতে দিচ্ছে না! এমনকি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি সাংবাদিকদেরও ভোট দেখতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
একই কথা বলেছেন পিডিপি নেতা ও মুখপাত্র ওয়াহিদ পারাও। তাঁর কথায়, ‘জম্মু-কাশ্মীরে সরকার বিদেশি হস্তক্ষেপ চায় না, অথচ আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জি-২০ সম্মেলন করে। ভোট দেখাতে কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানায়। দেখাতে চায়, তারাই শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। অথচ সত্য এই যে বিধানসভার ভোট হচ্ছে ১০ বছর পর। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভোটের কৃতিত্ব জনগণের। সরকারের নয়।’
বিজেপির মুখপাত্র সুনীল শেঠি অবশ্য সরকারকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘এতে আপত্তির কিছুই নেই। বিদেশিরা ভোট দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সরকার সায় দিয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিরা নাক গলাবেন ও ভারত তা মেনে নেবে।’
জম্মু-কাশ্মীরের তৃতীয় ও শেষ দফার ভোট আগামী ১ অক্টোবর। ফল ঘোষণা ৮ অক্টোবর।