জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গেও ড. ইউনূসের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
সব ঠিক থাকলে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন।
ঢাকা ও নিউইয়র্কের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ড. ইউনূস ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
এ ছাড়া আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বাগতিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রদত্ত ডিনার পার্টিতে অন্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও অংশ নেবেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছে ‘মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট’র বিশাল মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা ও নিউইয়র্কের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ড. ইউনূস ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
নিউইয়র্কে অতীতে কাজ করেছেন এবং এখন কাজ করছেন, বাংলাদেশের এমন পাঁচজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতিসংঘ অধিবেশনে তাঁর নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছান। তিনি সেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন। এরপর বিকেলে জাতিসংঘের অধিবেশনে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ প্রায় বিরল। গত তিন দশকে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের সঙ্গে জো বাইডেনের বৈঠকের তাৎপর্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেছেন, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করে গেছে। দুই সপ্তাহের মাথায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন খাতের সংস্কারসহ বাংলাদেশের সামনের দিনের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র যে সব ধরনের সহায়তা করবে, নিউইয়র্কের আসন্ন বৈঠক সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাত্রা হতে যাচ্ছে ড. ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরে বিভিন্ন বৈঠক বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সংস্থাগুলো যে জোরালোভাবে যুক্ত থাকবে, সেই বার্তাটিই দিচ্ছে।