দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:৩২

কিউবার মানুষ অভাবে চিনি মেশানো পানি খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।

কিউবা সরকার দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বেশ কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে লড়াই করছে। এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে অনেকেই শুধু পানিতে চিনি মিশিয়ে খেয়ে ঘুমাতে বাধ্য হন। সরকারি সিদ্ধান্তে রেশনের রুটির আকার ইতিমধ্যে ছোট করা হয়েছে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হাতের তালুর চেয়েও ছোট। চাল এখন দুর্লভ, আর তেল ও কফি পাওয়া যাচ্ছে না।

 

৫৭ বছর বয়সী রোসালিয়া টেরেরো হাভানায় একটি ভর্তুকি দেওয়া খাবারের দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, “অনেকেই কেবল চিনি মেশানো পানি খেয়েই ঘুমাতে যান।” তার পরিবারে সাত সদস্য রয়েছে, যারা প্রতিদিন একটি করে ভর্তুকির রুটি খেয়ে বেঁচে আছেন। কিউবা সরকার রেশনের রুটির ওজন ৮০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৬০ গ্রাম নির্ধারণ করেছে, যা পেট ভরানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

 

কমিউনিস্ট শাসিত কিউবায় মাত্র তিন বছর আগে বেসরকারি দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে এসব দোকানে কেনাকাটা করা বেশিরভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে। কিছু সরকারি দোকানেও ভর্তুকির খাবার পাওয়া যায় না, এবং যেসব দোকানে পাওয়া যায় সেগুলো কেবল বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে, যা অনেকের জন্য অসাধ্য।

 

বর্তমানে কিউবা গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। মূল্যস্ফীতি চরমে পৌঁছেছে, এবং একজন ব্যক্তির গড় মাসিক আয় মাত্র ৪২ ডলার। খাদ্য সংকট পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। রোসালিয়া বলেন, “আপনার টেবিলে চাল, পাস্তা বা ম্যাকারনি না থাকলে সেটা বলার মতো কিছু নয়, কিন্তু যখন কিছুই থাকে না, তখনই বেশি খারাপ লাগে।”

 

কিউবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমছে, ফলে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে রুটি উৎপাদনের জন্য ৩,৩০০ টন গম প্রয়োজন হয়, কিন্তু জুলাই ও আগস্ট মাসে তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এ মাসে মাত্র ৬০০ টন গম পাওয়া গেছে।

 

একই সময়ে, হাভানায় একটি রেশনের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ৫৫ বছর বয়সী লিনোরকা মন্টেনিগ্রো তার খালি ফ্রিজের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে কিছুই নেই। তিনি পাঁচ পাউন্ড চাল ও দুই পাউন্ড চিনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন, যা তার পুরো মাসের রেশন।

 

১৯৯০ সালের পর কিউবা এমন সংকটে আর কখনো পড়েনি। খাদ্য সংকট ছাড়াও, এখন ওষুধ, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সমস্যাগুলোর সাথেও লড়াই করতে হচ্ছে। কিউবা সরকার এই সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে, কারণ ১৯৬২ সাল থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আরও কঠোর করা হয়। কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ দাবি করেছেন, এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটিকে প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি সহ্য করতে হচ্ছে, যার এক-তৃতীয়াংশ ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য বিতরণে ব্যয় হয়।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট