রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন অধ্যায়ে ইউক্রেন ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে ‘ড্রাগন ড্রোন’। এই ড্রোনগুলোর বিশেষত্ব হলো এতে ব্যবহৃত থার্মাইট, যা অ্যালুমিনিয়াম গুঁড়া এবং আয়রন অক্সাইডের উত্তপ্ত মিশ্রণ। থার্মাইট ৪,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২,২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় পুড়ে, যা গাছ বা রুশ সেনাদের গোপন আশ্রয়স্থল পুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
‘ড্রাগন ড্রোন’ মূলত পুরোনো যুদ্ধাস্ত্রের আধুনিক রূপ। থার্মাইট প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছিল, এবং বর্তমানে ড্রোনের সঙ্গে এটি ব্যবহৃত হয়ে ড্রাগন ড্রোন তৈরি করা হয়েছে।
ড্রোনের মাধ্যমে ভয় সৃষ্টি করা একটি উদ্ভাবনী কৌশল। তবে, প্রতিরক্ষাশিল্প বিশ্লেষক নিকোলাস ড্রামন্ডের মতে, এ ধরনের ড্রোনের শারীরিক ক্ষতির চেয়ে মানসিক প্রভাব বেশি। তিনি বলেন, “ড্রোনের মাধ্যমে ভয় সৃষ্টি করা একটি নতুন কৌশল। শারীরিক ক্ষতির চেয়ে মানসিক ক্ষতির দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ড্রোনের বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায় ড্রোন কম উচ্চতায় উড়ে এবং আগুনের বৃষ্টি ঝরায়। গলিত লোহা যখন ড্রোন থেকে পড়তে থাকে, তখন এটি পৌরাণিক কাহিনির ড্রাগনের মতো আগুন ছড়িয়ে দেয়, এজন্য নাম রাখা হয়েছে ‘ড্রাগন ড্রোন’।
ইউক্রেনের ৬০তম মেকানাইজড ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, “স্ট্রাইক ড্রোন আমাদের প্রতিশোধের ডানা। এটি আকাশ থেকে সরাসরি আগুন নিয়ে আসে এবং আমাদের শত্রুদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর হুমকি।” তারা দাবি করে, “এই ড্রোন শত্রুর অবস্থান এমন নিখুঁতভাবে পুড়িয়ে দেয়, যা অন্য কোনো অস্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়।”
নিকোলাস ড্রামন্ডের মতে, থার্মাইটের প্রভাব সীমিত হলেও এটি মানসিক ভীতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। থার্মাইট যেকোনো ধাতব পদার্থ পুড়িয়ে দিতে সক্ষম এবং এর প্রতিরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
থার্মাইট প্রথমে ১৮৯০ সালে জার্মান রসায়নবিদ আবিষ্কার করেছিলেন। এটি মূলত রেলপথ ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হত, তবে পরে এটি সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা থার্মাইট বোমা ব্যবহার করেছিল, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও জার্মানি ও তার মিত্ররা এটি ব্যবহার করে শত্রুর অস্ত্র গলিয়ে ফেলত।
যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের রাজধানী টোকিওতে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে নাপাম বোমা ব্যবহার করেছিল। যদিও থার্মাইটের ব্যবহার আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ নয়, তবে এর প্রভাবের কারণে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতে ইউক্রেনের ছোট ছোট উদ্ভাবনী অস্ত্র, যেমন থার্মাইট ড্রোন, যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র পাল্টানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের ফলে দ্রুত ফলপ্রসূ পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। ড্রামন্ডের মতে, ইউক্রেন যদি বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে কুরস্কে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করতে হবে এবং থার্মাইটের মাধ্যমে রুশ সেনাদের মনে ভয় সৃষ্টি করতে হবে।