সুদানের চাদ সীমান্তের কাছে আদ্রে শহরের কর্দমাক্ত এবং নোংরা কাঁচা রাস্তায় চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে আছেন বুথাইনা (৩৮) এবং আরও কিছু নারী। প্রত্যেকের কোলেই রয়েছে তাদের পরম আদরের সন্তানরা—যারা এখন তাদের একমাত্র সম্বল।
এই নারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালাচ্ছেন। তাদের জীবনে অভাব আর মৃত্যুর ভয় নিত্যসঙ্গী। তারা শুধুই অজানা গন্তব্যে ছুটে চলছেন, খাবার-পানির অভাব তাদের সঙ্গী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে হতাশার সাথে বলেন, “ভবিষ্যৎ? কিসের ভবিষ্যৎ? আমাদের আর ভবিষ্যৎ নেই। আমার সন্তানরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।” সুদানে সেনা-আধাসেনাদের মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে এমন মায়েদের আহাজারি এখন ঘরে ঘরে।
গত বছরের ১৫ এপ্রিল সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সেনা এবং আধাসেনাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, লাখ লাখ বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয় এবং দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়। নারীদের ওপর শুরু হয় ভয়াবহ জুলুম ও অত্যাচার, এবং আধাসামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। বুথাইনার মতো হাজারো নারী শুধুমাত্র সন্তানের নিরাপত্তার জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসেন।
বুথাইনা বিবিসিকে বলেন, “আমরা বাড়ি থেকে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। শুধু আমাদের জীবনের জন্য দৌড়িয়েছি। আমাদের ঘর ভালো ছিল, কিন্তু এখন সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।”
শরণার্থী শিবিরগুলোর মানবেতর অবস্থার কথাও উঠে এসেছে। বৃষ্টির পর বন্যা হয়, ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছায় না এবং সেনা ও আধাসেনাবাহিনী অনেক সময় ত্রাণ চুরি করে নেয়। ফলে অসহায় মানুষেরা প্রয়োজনীয় সাহায্য পায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী, যিনি খার্তুমের কাছে ওমদুরমান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, জানান যে তার দুই বছরের ছেলের সঙ্গে তিনি বন্দি হয়েছিলেন। আধাসামরিক বাহিনীর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রতিদিন তারা আমার ছেলেকে একটি ঘরে নিয়ে যেত এবং আমাকে ধর্ষণ করার সময় আমি তার কান্না শুনতে পেতাম। অবশেষে আমি সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে এসেছি।”
সুদানের নারীদের এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসি জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ মন্তব্য করেছেন। তিনি তার নির্বাহীদের সাথে আদ্রে এবং পোর্ট সুদান সফর করেন এবং সুদানের ডি-ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে আদ্রে ক্রসিং উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান। তার উদ্দেশ্য হলো সুদানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এজেন্ডায় ফিরিয়ে আনা, কারণ বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতের মধ্যে সুদানের সমস্যাগুলোর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, “বিভিন্ন সংকট রয়েছে, তবে সুদানের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি পদক্ষেপ না নেয় তবে অনেক মানুষ মারা যাবে।”