ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে, ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে তিনি মন্তব্য করেন যে, শুধুমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে, এবং নয়াদিল্লীকে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিদেশি গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, যদি ভারত শেখ হাসিনাকে সেখানে রাখে, তাহলে তাকে চুপ থাকতে হবে যতক্ষণ না বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ফেরত চায়। ভারতের বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মন্তব্যকে অববন্ধুসুলভ বলে উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত রেখে দিতে চাইলে তাকে চুপ থাকতে হবে, কারণ ভারতে তার অবস্থান নিয়ে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। তিনি আরো বলেন, মাঝে মাঝে শেখ হাসিনার মন্তব্য সমস্যা তৈরি করছে।
ড. ইউনূস সম্প্রতি দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা এবং এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রসঙ্গে বলেন, “সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বড় করে উপস্থাপন করার বিষয়টি কেবল একটি অজুহাত।”
তিনি যোগ করেন যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামপন্থি এবং শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে—এ ধারণা নয়াদিল্লীকে পরিবর্তন করতে হবে।
ড. ইউনূস জানিয়ে দেন যে, ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার দেয়া বিবৃতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “এটি আমাদের জন্য বা ভারতের জন্য ভালো নয়। এতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।”
৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তার ভারতে অবস্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা বাড়িয়েছে।
ভারতের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থান জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “এটি মৌখিকভাবে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে যে হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “সবাই এটা বুঝতে পারছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলেছি যে তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অববন্ধুসুলভ আচরণ; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে প্রচার চালাচ্ছেন।”
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে ঘটিত সব নির্যাতনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা অপরিহার্য। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, তাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে, নতুবা বাংলাদেশের মানুষ শান্তি পাবে না।”
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে, ড. ইউনূস ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, সম্পর্ক উন্নত করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা বর্তমানে নিম্নমুখী।
ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে, ড. ইউনূস বলেন, কিছু চুক্তি যেমন ট্রানজিট এবং আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির পুনরায় পর্যালোচনার দাবি উঠেছে। এটি প্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে।