নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের জটিল সংক্রমণ, যা সাধারণ ঠান্ডা বা সর্দির চেয়ে বেশি গুরুতর। প্রতি বছর নিউমোনিয়াজনিত রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৬ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, এবং প্রতি মিনিটে নিউমোকক্কাল রোগে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে।
### নিউমোকক্কাল আশঙ্কা
নিউমোকক্কাল রোগ যে কাউকে হতে পারে, তবে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের, ফুসফুস, হার্ট, কিডনি এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি। যারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদেরও এই রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাদকাসক্তরাও সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন। ইমিউনিটি কম থাকলে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাল নিউমোনিয়ার দুটিই হতে পারে।
### নিউমোনিয়ার লক্ষণ
নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো উচ্চ জ্বর, অতিরিক্ত ঘাম, কাশি (কফ সহ) এবং কখনও কখনও কফের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া। বুকে ব্যথা (বিশেষ করে কাশি বা জোরে শ্বাস নেওয়ার সময়) এবং লুজ মোশন বা ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত বয়স্কদের সিজন পরিবর্তনের সময় নিউমোনিয়া বেশি দেখা যায়।
এক ধরনের নিউমোনিয়া হলো অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া, যা ঘটে যখন কেউ সঠিকভাবে গিলতে পারে না বা যার শ্বাসযন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল। এই অবস্থায় খাবার ফুসফুসে চলে গিয়ে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
### ডায়াগনোসিসের প্রথম ধাপ
ডায়াগনোসিসের প্রথম ধাপ হলো চেস্ট এক্স-রে। যদি এক্স-রে-তে প্যাচ দেখা যায়, তাহলে নিউমোনিয়া হিসেবে ধরা হয়। নিউমোনিয়ার Severity নির্ধারণ করতে CURB-65 স্কোর ব্যবহার করা হয়। রোগীর ইউরিয়া লেভেল এবং ডিসঅরিয়েন্টেশন যাচাই করাও জরুরি। যদি রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়, তবে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
### নিউমোনিয়ার সমস্যা
নিউমোনিয়া কিডনির উপর, লিভার ফাংশন এবং রক্তচাপের ওপর প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। চিকিৎসকরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই রোগীর চিকিৎসা করেন এবং অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন করেন। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স দেখা দেয়, ফলে বারবার অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করতে হয়, যা রোগীর আত্মীয়দের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।
### প্রতিরোধ
নিউমোকক্কাল রোগ প্রতিরোধে টিকা রয়েছে। সুতরাং জ্বর, সর্দি বা কাশির লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক: বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।