শিশুর ঘুমের সময় শ্বাসনালিতে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে পুনরায় স্বল্পকালীন শ্বাসরোধের ঘটনা ঘটে, যা ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থাকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়।
### শিশুদের নাক ডাকার কারণ
– **ঠাণ্ডা ও অ্যালার্জি:** ঠাণ্ডা লাগলে বা অ্যালার্জির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
– **টনসিল ও এডিনয়েডের সমস্যা:** টনসিল বা গলার পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থির প্রদাহের কারণে নাকের স্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
– **নাসিকা বিভাজকের বাঁক:** দুই নাকের মধ্যবর্তী পর্দা বাঁকা থাকলে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে, যা জন্মগতভাবে থাকতে পারে।
– **স্থূলতা:** স্থূল শিশুদের মাঝে নাক ডাকার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, কারণ তাঁদের গলায় বায়ু চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে।
– **থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোনের সমস্যা:** কিছু হরমোনজনিত সমস্যার জন্যও নাক ডাকা হতে পারে।
### স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
শিশুর ঘুমের সময় যদি শ্বাসনালিতে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে এটি পুনরাবৃত্তি শ্বাসরোধ ঘটাতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়। এর ফলে দিনে ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা এবং মনোযোগের অভাব হতে পারে, যা শিশুদের শিক্ষা ও মেধা বিকাশে বাধা দেয়। দীর্ঘদিন সমস্যা সমাধান না হলে শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
### রোগ নির্ণয়
– **রোগের ইতিহাস সংগ্রহ:** নাক ডাকার তীব্রতা, ঘুমের শারীরিক অবস্থান, এবং এটি কতদিন ধরে হচ্ছে।
– **ক্লিনিক্যাল লক্ষণ:** প্রতি রাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, এবং হরমোনজনিত সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস বা হাইপো থাইরয়েডিজম।
### পরীক্ষার পদ্ধতি
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুকে শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজন হলে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করাতে পারেন:
– এক্স-রে এডেনয়েড
– নাক ও কণ্ঠনালির অ্যান্ড্রোস্কপি
– থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা
– পলিসমোগ্রাফি: স্লিপ ল্যাবে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, ইইজি, ইএমজি, ইওজি, এবং শ্বাস-প্রশাসের ধরন মনিটর করা হয়।
### সমস্যার ঘরোয়া সমাধান
– অ্যালার্জি ও ঠাণ্ডা লাগা থেকে প্রতিরোধ করা।
– বিছানার মাথার দিকে কয়েক ইঞ্চি উঁচু রাখা।
– শিশুদের চিৎ হয়ে না শুইয়ে এক পাশ ঘুরে শোয়ার অভ্যাস তৈরি করা।
– ঘুমানোর আগে বেশি ভরপেট খাবার থেকে বিরত থাকা।
### চিকিৎসা
যদি নাক বাঁকা, এডিনয়েড, টনসিল, বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন করতে হতে পারে। ঘুমের সময় CPAP বা BIPAP মেশিন ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হতে পারে।
শিশুর নাক ডাকার বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং মনে রাখতে হবে, প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সবসময় উত্তম।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ।