দেশে বর্তমানে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ মৌসুমে যদি কোনো শিশুর জ্বর হয়, তবে ডেঙ্গুর সম্ভাবনা মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু জ্বর হলে কিভাবে বুঝবেন এটি ডেঙ্গু কি না? ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর লক্ষণগুলো সাধারণত তিনটি ধাপে প্রকাশ পায়:
### ১. জ্বরের ধাপ
এ ধাপটি সাধারণত দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। এই সময় শিশুর উচ্চ তাপমাত্রা থাকে, পাশাপাশি মাথাসহ শরীরে প্রচুর ব্যথা হয়। কথা বলতে না পারা ছোট শিশুরা অকারণে কাঁদতে থাকে। অনেক সময় বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে এবং শরীরে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
### ২. ক্রিটিক্যাল ধাপ
এই ধাপে শিশুর জ্বর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং অনেক শিশু নিচের লক্ষণগুলোতে ভুগতে পারে:
– শরীর খুব দুর্বল লাগে।
– শরীর চুলকায়।
– নাক বা দাঁতের গোড়া থেকে, প্রস্রাব বা বমির সঙ্গে রক্ত আসতে পারে।
– শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল দাগ পড়ে বা রক্ত জমে কালচে দাগ হয়।
– অস্থিরতা বা বিরক্তি প্রকাশ পায়।
– পেটে পানি জমে যায় এবং পেট ফুলে যায়।
– রক্তচাপ কমে যেতে পারে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় বা ঠান্ডা লাগে। নাড়ির স্পন্দন কমে যেতে পারে এবং এটি জীবন হুমকিতে ফেলতে পারে।
### ৩. সুস্থতার ধাপ
ক্রিটিক্যাল ধাপে যদি কোনো জটিলতা না ঘটে, তবে শিশু পরবর্তী দুই থেকে তিন দিনে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।
### জ্বর হলে করণীয়
– শিশুর পরিচর্যা, গোসল ও খাবার আগের মতো রাখতে হবে। তবে মাছ, মাংস ও ডিমের পাশাপাশি ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল, যেমন মাল্টা ও কমলা কিছুটা বেশি দিতে চেষ্টা করুন।
– শিশুকে প্রচুর তরল খাবার, যেমন পানি, ডাবের পানি, ফলের রস দিতে হবে। প্রতিদিন এক থেকে দুই প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন দেওয়াও খুব জরুরি।
– জ্বর কমানোর জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় প্যারাসিটামল দিন, কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রফেনজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না।
### নজরে রাখার বিষয়
– শিশু খুব দুর্বল, হাত-পা ঠান্ডা বা অস্থির দেখাচ্ছে কি না।
– বারবার বমি হচ্ছে কি।
– শিশুর নিয়মিত প্রস্রাব হচ্ছে কি না। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
– নাক, দাঁতের গোড়া বা বমির সঙ্গে রক্ত আসছে কি না।
– পায়খানার রং কালচে হচ্ছে কি।
– শরীরের কোনো স্থানে রক্ত জমাট বাঁধার মতো মনে হচ্ছে কি না।
– পেটব্যথা বা পেটে চাপ দিলে ব্যথা হচ্ছে কি না।
– পেট ফোলা লাগছে কি।
– শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কি।
– কিশোরীদের অতিরিক্ত মাসিক হচ্ছে কি।
– শোয়া অবস্থায় থেকে উঠতে পারছে না, উঠলেই মাথা চক্কর দিচ্ছে কি।
উপরোক্ত লক্ষণের যেকোনো একটি যদি শিশুর মধ্যে দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।