### বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস: সচেতনতার গুরুত্ব
গতকাল ১২ অক্টোবর পালন করা হয়েছে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল “Informed Choices, Better Outcomes”। এর মূল লক্ষ্য হলো আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য সঠিক তথ্যের গুরুত্ব তুলে ধরা, যাতে তারা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে মিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং চিকিৎসার মান উন্নত করতে পারে। এই প্রতিপাদ্য রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ পরামর্শ এবং সঠিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যা রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
আরথ্রাইটিস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এর কারণে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। আসুন, আমরা আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে আরও জানি, কেন এটি হয় এবং কীভাবে এর চিকিৎসা করা যায়।
### আর্থ্রাইটিস কী?
আরথ্রাইটিস একটি রোগ যা শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধি বা জোড়াকে প্রভাবিত করে। এটি মূলত সংযোগস্থলের প্রদাহ, ব্যথা, ফোলা এবং হাড়ের ক্ষয় সৃষ্টি করে। এর বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এবং গাউট।
### আর্থ্রাইটিস কেন হয়?
আরথ্রাইটিসের কারণ বিভিন্ন প্রকারের ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:
1. **বয়স**: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অস্থিসন্ধির ক্ষয় এবং হাড়ের ঘর্ষণ বেড়ে যায়, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মূল কারণ।
2. **জেনেটিক ফ্যাক্টর**: কিছু মানুষের শরীরে এ রোগের ঝুঁকি বংশগতভাবে বেশি।
3. **ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা**: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুলক্রমে নিজ অস্থিসন্ধিকে আক্রমণ করে, যা একটি অটোইমিউন রোগ।
4. **আঘাত**: গুরুতর আঘাত বা সংযোগস্থলের বারবার ক্ষতি অস্থিসন্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
5. **অতিরিক্ত ওজন**: অতিরিক্ত ওজন অস্থিসন্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
6. **সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগ**: কিছু সংক্রমণ বা অন্যান্য রোগ, যেমন লুপাস বা গাউট, অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে আর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে।
### আর্থ্রাইটিসের সাধারণ লক্ষণ
– জোড়ায় ব্যথা বা অস্বস্তি
– জোড়া ফুলে যাওয়া
– জোড়ার শক্ত হয়ে যাওয়া বা নড়াচড়া করতে সমস্যা
– জোড়ার চারপাশে লালচে ভাব বা উত্তাপ অনুভব করা
– সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অস্থিসন্ধি শক্ত মনে হওয়া
### আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা
আরথ্রাইটিসের চিকিৎসা রোগের প্রকারের ওপর নির্ভর করে, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহৃত হয়:
1. **ওষুধ**:
– *প্রদাহনাশক ও ব্যথানাশক*: যেমন ইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন এবং অন্যান্য নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs)।
– *ডিএমএআরডি (DMARDs)*: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
– *স্টেরয়েড*: প্রদাহ কমানোর জন্য ইনজেকশন বা ঔষধ হিসেবে দেওয়া হয়।
2. **ফিজিওথেরাপি**: জয়েন্টের ব্যথা, প্রদাহ এবং কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
3. **ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম**: নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম অস্থিসন্ধিকে শক্তিশালী ও নমনীয় রাখে।
4. **উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস**: ওমেগা-৩, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
5. **সার্জারি**: অস্থিসন্ধির খুব বেশি ক্ষতির ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন জয়েন্ট প্রতিস্থাপন।
6. **জীবনযাত্রার পরিবর্তন**: দৈনন্দিন কাজের সময় সঠিক অঙ্গভঙ্গি ও আরগোনমিক আসবাব ব্যবহার করা।
### প্রতিরোধ
– নিয়মিত ব্যায়াম করা
– সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
– ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
– আঘাত থেকে অস্থিসন্ধি রক্ষা করা
– দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত থাকা
সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।
**লেখক:** চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।