### দেশে ক্যান্সারের সংক্রমণ: উদ্বেগজনক বৃদ্ধির কারণ
বাংলাদেশে ক্যান্সারের রোগী সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ৩.৫ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। আশঙ্কার বিষয় হলো, বৃদ্ধদের পাশাপাশি কম বয়সীদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে ২০, ৩০, এবং ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে মলদ্বার, কলোরেক্টাল এবং স্তন ক্যান্সারের মতো রোগের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই অবস্থাকে “আর্লি অনসেট ক্যান্সার” বা অকালে ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
গত দশকে ২৪টি দেশে ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে কলোরেক্টাল ক্যান্সারের হার বেড়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নরওয়ে ও আর্জেন্টিনা অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল সম্মেলনে এই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশিত হয়।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকরা ৫০টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ১৪টি দেশে কেবল তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, যদিও বৃদ্ধদের মধ্যে এটি স্থিতিশীল রয়েছে।
#### কারণগুলো
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে স্থূলতা এবং মেটাবলিক সিনড্রোমকে দায়ী করা হচ্ছে। এই শারীরিক অবস্থাগুলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং মূল হরমোনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের কারণে ১৮ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৭ ধরনের ক্যান্সার, যার ১০টি স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত, যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের মধ্যে বেড়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুজি ওজিনো বলেন, “সব তথ্য মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এর মূল কারণ।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে, অতিরিক্ত চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধক অবস্থার সৃষ্টি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃত্রিম আলো এবং ঘুমের অভাবের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, কম ঘুমানোর ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রাতের পালায় কাজ করার সময় কৃত্রিম আলোতে বেশি সময় কাটানোর কারণে মানুষের শারীরিক ও জৈবিক চক্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়েও গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
### উপসংহার
ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, তবে এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, বিভিন্ন জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং শরীরে বিষাক্ত পদার্থের প্রবেশের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। সামনের বছরগুলোতে এই সমস্যা মোকাবেলায় আরও গবেষণার প্রয়োজন।