গম থেকে উৎপন্ন আটা ও ময়দা হলো একটি স্টার্চজাতীয় খাবার, যাতে গ্লুটেন থাকে। গ্লুটেন অসহিষ্ণুতা বা সংবেদনশীলতা যাদের রয়েছে, তাদেরকে আগে আটা-ময়দা থেকে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে দেখা গেছে, যাদের গ্লুটেন হজমে সমস্যা নেই, তাঁরাও যদি দীর্ঘদিন আটা-ময়দার খাবার খান, তবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জ্বালা। সাধারণত গ্লুটেন থেকে বদহজম হয়ে থাকে। এসব খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যা অন্ত্রের ক্ষতি করে।
গম থেকে উৎপন্ন আটা ও ময়দার তৈরি খাবার যেমন রুটি, বিভিন্ন সিরিয়াল, রাই, বার্লি, ওটস, প্যাটিস, কেক, বিস্কুট, পিৎজা, পাস্তা, গমের ব্রেডক্রাম্ব, পেস্ট্রি এবং ন্যুডলস—এগুলোতে প্রচুর গ্লুটেন থাকে। কিছু কিছু ওষুধেও গ্লুটেন থাকতে পারে।
### গ্লুটেন বা আটা-ময়দা এড়িয়ে চলার কারণসমূহ:
১. **অন্ত্রের স্বাস্থ্য**: আটা-ময়দা অন্ত্রের স্বাস্থ্যে সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন অন্ত্রে জীবাণু বৃদ্ধি, স্নায়বিক কোলন সমস্যা, পেটে প্রদাহজনিত রোগ এবং অন্ত্রে প্রদাহ। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গ্যাস, এবং বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. **অটিজম**: গ্লুটেন পদ্ধতিগত প্রদাহ বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। তাই অটিজমের রোগীদের জন্যও এটি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩. **অন্ত্র ফুটো হওয়া**: আটা-ময়দার খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে অনেকের অন্ত্র ফুটো হয়ে যেতে পারে, ফলে রক্তের পুষ্টি উপাদান কোষে প্রবেশ করতে পারে না এবং পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এটি গ্যাস ও বমি ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
৪. **থাইরয়েড সমস্যা**: যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে, তাদের বিপাককে ধীর করে দেয়, ফলে তারা দেরিতে ফলাফল পায়।
৫. **অক্সিজেন চক্রের সমস্যা**: এসব খাবার নিয়মিত খেলে অক্সিজেন চক্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়, ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
উল্লেখযোগ্য যে, উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলি সকলের ক্ষেত্রে ঘটে বা হবে এমনটি নয়। তবে সমস্যা শুরু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রের সমস্যার জন্য গ্লুটেনকে বেশি দায়ী করা হচ্ছে।
আপনি যদি গম ও গ্লুটেনমুক্ত বিকল্প খাদ্য নিতে চান, তাহলে চালের আটা, ভুট্টা, সয়াবিন, আলু, কিনোয়া, অ্যারারুট, ছোলা, এবং মসুর ডালের আটা ব্যবহার করতে পারেন।
— সাজিয়া মাহমুদ, কনসালট্যান্ট পুষ্টিবিদ, প্যানকেয়ার হাসপাতাল।