**প্রতিদিন হাসপাতাল ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী, যেখানে অনেকেই শিশু।** এদের মধ্যে জটিলতার ঝুঁকি বেশি এবং মৃত্যুহারও তুলনামূলক কম নয়। ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায়, চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই মশার হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করাই হবে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
### ডেঙ্গু জ্বর এবং এডিস মশা
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহন করে এডিস মশা। এই মশার কামড় থেকে শিশুদের রক্ষা করা এবং এর আবাসস্থল ধ্বংস করা ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
### এডিস মশার জন্ম ঠেকাতে
এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পানি থেকে বংশবিস্তার করে। তাই বাড়ির আশেপাশে বা অভ্যন্তরে যেখানে জল জমে আছে, সেগুলো অপসারণ করতে হবে। এসি, ফুলের টব এবং ফ্রিজের নিচের জায়গাগুলো থেকে নিয়মিত পানি সরাতে হবে।
– **জল জমে থাকার উপযুক্ত জিনিস**: বালতি, খালি বোতল, মগ, পাতিল ইত্যাদি উল্টে রাখুন।
– **পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা**: বাড়ির আশপাশ ও বারান্দা-করিডর পরিষ্কার রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
– **পরিত্যক্ত জিনিস পরিষ্কার করুন**: পরিত্যক্ত টায়ার, নারকেল খোসা ও অন্যান্য আবর্জনার জায়গা থেকে পানি জমতে দেবেন না। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
### মশার কামড় থেকে রক্ষা
– **মশারি ব্যবহার**: ঘুমানোর সময় শিশুর বিছানায় মশারি ব্যবহার করতে হবে, রাতের পাশাপাশি দিনের বেলাতেও। বিশেষ করে নবজাতককে মশারির মধ্যে রাখা উচিত।
– **অন্য রোগের শিশুর জন্য সতর্কতা**: হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগে আক্রান্ত শিশুকে মশারির মধ্যে রাখা প্রয়োজন, কারণ ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ কামড় দিলে তা অন্য শিশুর মধ্যে ছড়াতে পারে।
– **গা ঢাকা পোশাক পরানো**: শিশুকে গা ঢাকা পোশাক পরান। ফুলহাতা শার্ট, ফুলপ্যান্ট, লম্বা ঝুলের ফ্রক, মোজা ও জুতা পরানোর চেষ্টা করুন। হালকা রঙের পোশাক ভালো।
### মশা প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত ক্রিম বা স্প্রে
– **মশা প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে**: শিশুর বয়স ও ত্বকের উপযোগী মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন। এই রেপেলেন্ট কয়েক ঘণ্টা পরপর প্রয়োগ করতে হবে।
– **ছোট শিশুদের জন্য বিকল্প**: ছোট শিশুরা যদি ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করতে না পারে, তাদের হাতে মশকুইটো রেপেলেন্ট বেল্ট বা পোশাকে প্যাচ ব্যবহার করুন।
### নিরাপদ মশা প্রতিরোধ ব্যবস্থা
– **অ্যারোসল বা মশার কয়েল**: বাজারে প্রচলিত অ্যারোসল বা মশার কয়েলের ধোঁয়া সকলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তার বদলে মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, ইলেকট্রিক কয়েল এবং মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ ব্যবহার করুন। তবে এই সামগ্রীগুলো যেন শিশুর নাগালের বাইরে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
### সামাজিক সচেতনতা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র নিজের বাড়ির চারপাশে জলাবদ্ধতা দূর করলেই হবে না; প্রতিবেশীদেরও সচেতন করতে হবে। স্কুলগুলোতেও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো উচিত, কারণ অনেক শিশু স্কুল বা কোচিং থেকে মশার কামড় খেয়ে আসে। তাই এসব জায়গাকেও মশামুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।