আজ ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এই দিবসের লক্ষ্য হলো মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও রোগ নিয়ে বিদ্যমান কুসংস্কার কমিয়ে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা।মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য একটি সহায়ক কর্মপরিবেশ অপরিহার্য। কর্মে ব্যস্ত থাকা মন ভালো রাখে, আর মন ভালো থাকলে কর্মজীবনও আনন্দময় হয়। তবে কর্মক্ষেত্রে যদি সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকে, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে কর্মদক্ষতাও কমে যায়। এ বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এখনই সময়।’
বেকারত্ব যেমন মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী, তেমনি কর্মস্থলে অতিরিক্ত কাজের চাপ, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের ভারসাম্যহীনতা, সহকর্মীদের প্রতিযোগিতা, নিরাপত্তাহীনতা, কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া, এবং চাকরি হারানোর ভয়—এসব বিষয় মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। নারী কর্মীদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা আরও বেশি প্রভাব ফেলে। এসব কারণে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, এবং চাপজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে, এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যাপ্রবণ বা মাদকাসক্তও হয়ে উঠতে পারেন।
বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ১৮.৭ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন, এবং ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ১২.৬ শতাংশ।
### মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব কর্মপরিবেশের প্রয়োজনীয়তা
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন:
– কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
– সাফল্যকে স্বীকৃতি ও উৎসাহিত করা, পুরস্কার প্রদান করা।
– কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান।
– ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা।
– কর্মীদের ছুটি উপভোগ এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া।
এছাড়া কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ প্রদান, পরামর্শদাতা নিয়োগ, এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সভা, সেমিনার এবং গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা উচিত।
— অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল-মামুন,
পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা