**গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট: একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা**
গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এর কারণগুলো নিম্নরূপ:
### স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় ফুসফুসের পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় ডায়াফ্রাম, যা বুক ও পেটের মধ্যে একটি পর্দার মতো কাজ করে, প্রায় ৪ সেমি উপরে উঠে যায়। ফলে বুকের আকার আড়াআড়ি ভাবে প্রায় দুই সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। হরমোনের অতিরিক্ত মাত্রা শ্বাসনালির ঝিল্লির (মিউকাস মেমব্রেন) মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারে, যা ক্ষরণের পরিমাণ বাড়ায়। এই সময় সারা শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা ১৫% থেকে ২০% বাড়াতে হয়, এবং মিনিটে শ্বাস গ্রহণের পরিমাণ ২০-৫০% বৃদ্ধি পায়, যা মূলত প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে ঘটে। তবে গর্ভাবস্থায় শ্বাস নেওয়ার প্রতি মিনিটে হার অপরিবর্তিত থাকে।
### সংক্রমণ
গর্ভাবস্থায় রাইনাইটিস (নাক দিয়ে পানি পড়া), সাইনোসাইটিস, ফ্যারিনজাইটিস এবং ল্যারিঙ্গো-ট্রেকেয়াইটিসের মতো সংক্রমণ হতে পারে। এই সময়ে রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, যেমন স্ট্রেপটোকক্কাল নিউমোনিয়া, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস। এই সংক্রমণের লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি গড়ানো, কাশি, মাথাব্যথা এবং জ্বর দেখা দেয়।
### শ্বাসনালির সংক্রমণ
ব্রঙ্কাইটিস সাধারণত ভাইরাল হলেও এটি ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হতে পারে, যেমন স্ট্রেপ্টোকক্কাস এবং হিকোফাইনাস। কাশি এবং জ্বর হলো এর প্রধান লক্ষণ, এবং নাক দিয়ে পানি গড়ানোর বিষয়টিও থাকে। নিউমোনিয়া গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে হতে পারে—ব্যাক্টেরিয়াল, ভাইরাল, ফাঙ্গাল বা প্যারাসাইটিক।
#### ভাইরাল নিউমোনিয়া
যখন ফ্লুর রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে, কিন্তু নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তখন এটি ভাইরাল নিউমোনিয়া সন্দেহ হয়।
#### ভেরিসেলা নিউমোনিয়া
চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে শতকরা ২০% নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এসাইকোভির ব্যবহার শুরু করা উচিত, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য সাধারণত নিরাপদ।
গর্ভাবস্থায় প্রায় ৩৩% থেকে ৪০% মহিলা শ্বাসকষ্টের কোনো পরিবর্তন অনুভব করেন না, ৩৫% থেকে ৪২% ক্ষেত্রে হাঁপানি বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং ১৮% থেকে ২৮% ক্ষেত্রে অবস্থার উন্নতি হতে দেখা যায়।
**লেখক:** বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার, ঢাকা।