ডেঙ্গু হল একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। এর সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে—তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, র্যাশ, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তপাত এবং দুর্বলতা। কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু উপসর্গহীনও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসার সুবিধার জন্য উপসর্গ ও অন্যান্য মানদণ্ডের ভিত্তিতে ডেঙ্গু রোগীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করেছে: গ্রুপ এ, বি এবং সি।
### গ্রুপ এ: সতর্কতা চিহ্নহীন ডেঙ্গু
এ গ্রুপের রোগীরা সাধারণত মাথাব্যথা, র্যাশ ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে থাকেন, কিন্তু কোনো বিপদের চিহ্ন নেই। এই রোগীদের বাসায় চিকিৎসা দেওয়া যায়। চিকিৎসার কিছু নির্দেশনা:
– পর্যাপ্ত বিশ্রাম
– পর্যাপ্ত পানি ও তরল পান (যেমন: পানি, স্যুপ, দুধ, জুস), যা সাধারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য ২.৫ লিটার বা ৮-১০ গ্লাস হওয়া উচিত।
– জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে ডোজ চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী নিতে হবে।
– এনএসএআইডি ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।
– যদি অবস্থা খারাপ হতে থাকে (যেমন ৪-৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া) বা কোনো সতর্কতা চিহ্ন দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন।
### গ্রুপ বি: সতর্কতা চিহ্নযুক্ত ডেঙ্গু
এই গ্রুপে তারা পড়বে, যাদের সাধারণ উপসর্গের সঙ্গে কিছু সতর্কতা চিহ্ন আছে। কিছু বিশেষ রোগাক্রান্ত রোগী ও নির্দিষ্ট বয়সের মানুষেরা (যেমন: শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হার্টের রোগী, কিডনি রোগী) এই গ্রুপে পড়ে। এই রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে। সতর্কতা চিহ্নগুলো হলো:
– অনবরত বমি
– প্রচণ্ড পেটব্যথা
– অতিরিক্ত দুর্বলতা
– অল্প রক্তপাত
– বুকে বা পেটে পানি আসা
– লিভার বড় হয়ে যাওয়া
– রক্তের হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়া বা দ্রুত প্লাটিলেট কমে যাওয়া।
হাসপাতালে ভর্তির পর রোগীর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে শিরায় স্যালাইন ও অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, রক্তচাপ ও প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়।
### গ্রুপ সি: গুরুতর ডেঙ্গু
এই গ্রুপের মধ্যে পড়ে অতিরিক্ত রক্তপাতের রোগী, শকের রোগী (যাদের রক্তচাপ খুব কম বা অনুপস্থিত, প্রস্রাব তৈরি হচ্ছে না, শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে) এবং এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু রোগীরা (যাদের হার্ট, ফুসফুস, কিডনি বা মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়)। এই রোগীদের জটিলতা বেশি এবং চিকিৎসা করতে হবে বিশেষায়িত হাসপাতালে, যেখানে আইসিইউসহ সব সুযোগ-সুবিধা আছে।
এদের কোনো সময় কার্ডিয়াক মনিটরিং, ডায়ালাইসিস, বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রয়োজন হতে পারে। এই রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন এবং দ্রুত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।