জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা গত এক বছরে দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অযোগ্য এবং সাবেক সরকারের দলীয় কিছু কর্মকর্তার অদক্ষতার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ১১টি দাতা সংস্থার বিনিয়োগে পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মসূচি এখন হুমকির সম্মুখীন।বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে জানা গেছে, সক্ষম দম্পতিরা বেশি করে বেসরকারি খাত থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংগ্রহ করেন। তবে, দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলো সরকারের কাছ থেকে সামগ্রী নেন এবং এখন তারা প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পাচ্ছেন না। মাঠপর্যায়ে এসব সামগ্রীর অভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্তমানে দেশের ১০৫টি উপজেলায় কনডমের সংকট এবং ৪৪৫টি উপজেলায় খাওয়ার বড়ির অভাব রয়েছে। এই দুই ধরনের সামগ্রী জন্মনিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
জানা গেছে, কনডম, খাওয়ার বড়ি, আইইউডি, ইনজেক্টেবলস ও ইমপ্ল্যান্টসহ মাঠকর্মীরা সাধারণত ৫ ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দম্পতিদের মধ্যে বিতরণ করেন। এর মধ্যে কনডম ও বড়ি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাসে মাঠকর্মীরা ৫০ লাখ ৩৫ হাজার কনডম এবং ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার সাইকেল বড়ি দম্পতিদের কাছে পৌঁছে দেন।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ৪৯৩টি উপজেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর তথ্য প্রতিদিন হালনাগাদ করা হয়, যেখানে দেখা গেছে, ১০৫টি উপজেলায় কনডমের মজুত শূন্য। ১৯১টি উপজেলায় এই উপকরণের মজুত শূন্য হতে যাচ্ছে এবং ৮৩টি উপজেলায় মজুত আদর্শের চেয়ে কম। কনডমের সন্তোষজনক মজুত রয়েছে ৭২টি উপজেলায় এবং অতিরিক্ত মজুত আছে ৪২টি উপজেলায়। অন্যদিকে, খাওয়ার বড়ির অবস্থা আরও উদ্বেগজনক; ৪৪৫টি উপজেলায় নারীদের জন্য দেওয়ার মতো বড়ি নেই।
বর্তমানে ৪০টি উপজেলায় বড়ি খুব শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। প্রয়োজনের তুলনায় কম বড়ি মজুত আছে দুটি উপজেলায়, সন্তোষজনক পরিমাণ বড়ি রয়েছে ৬টি উপজেলায়, কিন্তু অতিরিক্ত বড়ি কোনো উপজেলায় নেই। ইনজেক্টেবলের অবস্থাও খারাপ; ২৫টি উপজেলায় এটি একটিও নেই এবং ১৫৫টি উপজেলায় ইনজেক্টেবলের মজুত শিগগিরই শেষ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেলে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ বাড়বে, যা মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার শূন্যে নামিয়ে আনার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করা কঠিন হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইফুল্লাহিল আজম জানান, পূর্ববর্তী কর্তৃপক্ষ সংকট মোকাবেলা করেননি। বর্তমানে তারা সংকট কাটাতে চেষ্টা করছেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রাজস্ব বাজেট থেকে খরচ করার ক্ষমতা দেয়া আছে, তবে গত বছর মন্ত্রণালয় সেই ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা দেয়। যতবারই অধিদপ্তর উদ্যোগ নেয়, ততবারই স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিবের অবহেলায় কার্যক্রম থেমে যায়।
উন্নয়ন বাজেট থেকে সামগ্রী কিনতে হলে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক মাস লেগে যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ৭ মার্চ দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়, কিন্তু যোগ্য দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দরপত্র বাতিল করে অধিদপ্তর। এরপর বিভিন্ন পক্ষ অভিযোগ করে, হাইকোর্টে মামলা হয় এবং সেই জট এখনো খোলেনি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।