দেশে নিয়মিতভাবে ওষুধের দাম বৃদ্ধি পাওয়াটা যেন একটি সাধারণ প্রথায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ট্যাবলেট, ভিটামিন, গ্যাস্ট্রিক ও ডায়াবেটিক ওষুধসহ বিভিন্ন ইনজেকশনের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিদপ্তর ও প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাবে এই বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফলেওষুধের বাজারে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা, ওষুধের দাম ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
রাজধানীর গোপীবাগ, শাহবাগ, মিটফোর্ড এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত মোট ওষুধের মাত্র ৩ শতাংশের দাম নির্ধারণ করতে পারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর; বাকি ৯৭ শতাংশের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানিগুলো।
এই সুযোগে কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে, প্রায়শই বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ওষুধের কাঁচামাল, মার্কেটিং খরচ ও ডলারের দাম বৃদ্ধির মতো যুক্তি দিয়ে। গত ২৯ এপ্রিল উচ্চ আদালত থেকে ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
ফার্মেসিগুলোর পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়, গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের নাপা ১০ এমএল আইভি ইনজেকশনের দাম ছিল ১১০ টাকা, এখন তা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই কোম্পানির এসিফিক্স ট্যাবলেটের দাম ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায়, এবং রসুটিন ট্যাবলেটের দাম ৩৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকায় উঠেছে। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের রসুভাস্টাটিন ট্যাবলেট এক পাতার (১০টি) দাম ১৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে।
শাহবাগের মা ফার্মেসির কর্মচারী শওকত ইমাম বলেন, চলতি বছর শুরু থেকে বিভিন্ন ওষুধের দাম একাধিকবার বেড়েছে, এবং কিছু কিছু ওষুধের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভিটামিন ও ইনজেকশনের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে নজরদারি নেই বলেই মনে হচ্ছে।
মিটফোর্ড এলাকার রংধনু ফার্মেসির বিক্রেতা রতন সাহা জানান, কোম্পানিগুলো কয়েক মাস পরপর দাম বাড়াচ্ছে। তারা প্যাকেটে কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছু ছাড় দিয়ে ওষুধ বিক্রি করেন। তবে দাম বাড়ানোর ফলে ক্রেতাদের সঙ্গে বিতর্কের ঘটনা ঘটে।
মিটফোর্ডের শতদল পোদ্দার বলেন, ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেলে তার পরিবারের জন্য চিকিৎসা খরচ বাড়ছে। প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকার ওষুধ লাগে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম সরকারের দ্বারা নির্ধারণ করা উচিত। ১৯৯৪ সালে কোম্পানির দাবির মুখে নেওয়া সিদ্ধান্তের পর থেকেই এ খাতে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধকে অত্যাবশ্যক তালিকায় রেখে এর দাম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অন্যান্য দেশে ওষুধের দাম নির্ধারণে আলাদা ব্যবস্থাপনা রয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই।