পৃথিবীজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন, যা হাই ব্লাড প্রেশার নামেও পরিচিত, নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচিত হয়। রক্তচাপ অনেক সময় তুঙ্গে উঠলেও তা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষতি সাধন করে। বেশিরভাগ উচ্চ রক্তচাপের রোগী খাবারদাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকেন। কেউ টকজাতীয় খাবার খেয়ে প্রেসার কমাতে চান, আবার কেউ দুধ ও ডিমের মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেন এই ভয়ে যে প্রেসার বেড়ে যাবে। কিন্তু এই অতিরিক্ত সচেতনতা সবসময় কার্যকরী নয়।
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা থাকে, যেমন খাওয়ার স্যালাইন নিয়ে। খাওয়ার স্যালাইন কিছু পরিস্থিতিতে অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে। অনেক রোগী মনে করেন, স্যালাইন লবণ রয়েছে বলে এটি খেলে প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু ডায়রিয়া বা বমির ফলে শরীর পানির ও লবণের অভাবে ভোগে। এ অবস্থায় স্যালাইন পান করা খুবই জরুরি; অন্যথায় পানিশূন্যতা, লবণশূন্যতা বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যা মস্তিষ্ক এবং মাংসপেশির কার্যক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই শরীর থেকে পানি বা লবণ বেরিয়ে গেলে স্যালাইনের মাধ্যমে তা পূরণ করা উচিত, উচ্চ রক্তচাপ থাকুক বা না থাকুক।
ডেঙ্গু বা অন্যান্য অসুস্থতায় রক্তচাপ কমলে স্যালাইন পান করা যেতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে লবণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এর ঘাটতি পূরণে স্যালাইন প্রয়োজন হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলেই স্যালাইন পান করা যাবে না, এই ধারণা সঠিক নয়; বিশেষ পরিস্থিতিতে এটি প্রয়োজনীয় হতে পারে।
ডাবের পানি নিয়েও কিছু প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের ধারণা, ডাবের পানি খেলে প্রেসার বাড়তে পারে। কিন্তু ডাবে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সোডিয়াম নামক লবণ প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করলেও পটাশিয়ামের কাজ উল্টো। তাই ডাবের পানি পান করলে রক্তচাপ কিছুটা কমতে পারে। তবে যাদের রক্তচাপের সঙ্গে কিডনির সমস্যা আছে, তাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কখনও কখনও বেড়ে যেতে পারে।
শুধু উচ্চ রক্তচাপ নয়, যেকোনো রোগে খাবারদাবার এবং জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। তবে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের বিপদ ডেকে আনার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।