হরমোনের ভারসাম্যই সুখের চাবিকাঠি!
হরমোনের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা সুস্থতা এবং সুখের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু যখন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটে, তখন শারীরিক ও মানসিক নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। আসুন জানি এমন ৬টি অভ্যাস যা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।
১. সকালের নাশতায় পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণের গুরুত্ব
শহুরে জীবনে শর্করাজাতীয় খাবারের প্রাধান্য দিন দিন বেড়েই চলেছে, আর অনেকেই সকালের নাশতা না করার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। কিন্তু সকালের নাশতা এড়িয়ে চলা বা অতিরিক্ত শর্করা খাওয়া উভয়ই ক্ষতিকর হতে পারে। সকালের নাশতায় প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, কর্টিসল হলো মানসিক চাপের হরমোন, যা সকালের সময়ে সবচেয়ে বেশি নিঃসৃত হয়। প্রোটিনসমৃদ্ধ সকালের নাশতা কর্টিসলের নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে এবং আপনার স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
একটি সেদ্ধ ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাই সকালের নাশতায় দুটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া আপনার প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে।
২. খালি পেটে ক্যাফেইন
সকালে উঠেই যদি এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা বা কফি পান করেন, তাহলে এটি আপনার কর্টিসল নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। খালি পেটে ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
৩. জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার
জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড এবং অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। এসব খাবার রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা চুল পড়া, ত্বকের সমস্যা ও ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
৪. রাতে ঠিকমতো না ঘুমানো
মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। দিনের বেলায় মেলাটোনিনের নিঃসরণ প্রায় হয় না। তাই যদি ভোরে সূর্যের আলো দেখে ঘুমাতে যান, তাহলে আপনার শরীরের হরমোন নিঃসরণ ভারসাম্যহীন হতে পারে। মেলাটোনিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কর্টিসল কমে আসে। রাতে সঠিক পরিমাণে ঘুম না হলে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হয়। গ্রোথ হরমোনও রাতে ঘুমের প্রথম প্রহরে সবচেয়ে বেশি নিঃসৃত হয়, তাই বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য রাতের ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. প্রকৃতির সাথে সময় না কাটানো
সেরোটোনিন, যা ‘হ্যাপি হরমোন’ নামে পরিচিত, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ঘুম, হজম ক্ষমতা, শিক্ষা, ক্ষুধা এবং শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমে সহায়তা করে। সূর্যের আলো, প্রকৃতির সংস্পর্শ, এবং যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে সেরোটোনিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রকৃতির সংস্পর্শে না গেলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বাড়তে পারে।
৬. হাসতে না পারা
“হাসতে নেই মানা, হাসলেই আসে সুখের ফোয়ারা।” হাসা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হাসলেই এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। হাসার মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি পায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, হাসার ফলে আমাদের মনও ভালো থাকে।
এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ কেবল হাসার মাধ্যমেই নয়, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ব্যায়াম করা, অথবা হাঁটার মাধ্যমেও বৃদ্ধি পায়।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে