মলত্যাগের সমস্যা একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা, যা প্রায় সকলেই কিছু সময়ের জন্যে ভোগেন। তবে, কখনও কখনও এই সাধারণ সমস্যা জটিল হয়ে যায়। বিশেষ ধরনের একটি সমস্যা হলো বাধাগ্রস্ত মলত্যাগ।
বাধাগ্রস্ত মলত্যাগ কি? এটি একটি বিশেষ ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য। এই সমস্যায় ভোগা রোগী টয়লেটে ঢুকে দীর্ঘ সময় কাটান, কিন্তু মলত্যাগে অক্ষম থাকেন। তারা বিভিন্ন উপায়ে চাপ প্রয়োগ করেন, যেমন মলদ্বারের পাশে চাপ দেওয়া, পা নড়ানো, এমনকি আঙুল দিয়ে মলদ্বারে চাপ দেন। তাদের মল কখনও পরিষ্কার হয় না, এবং কোষ্ঠ পরিষ্কারের অনুভূতি পাওয়া যায় না। এদের মধ্যে সারাক্ষণ অস্বস্তি ও পেটে জ্বালা অনুভূতি থাকে।
এসব রোগী বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খান, কিন্তু সাধারণত কোনো লাভ হয় না। ল্যাকজেটিভ বা মল নরম করার ওষুধ খেয়ে তারা আরও দুর্বল হয়ে পড়েন, এবং কিছু রোগী মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান।
কারণ: এই সমস্যাটির ইংরেজি নাম Obstructed Defecation Syndrome (ODS) এবং এটি বাংলায় ‘বাধাগ্রস্ত মলত্যাগ’ বলে পরিচিত। মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত কয়েকটি জটিল কারণে বাধাগ্রস্ত মলত্যাগ ঘটে। এর মধ্যে একটি হলো রেকটাল ইন্টাসসেপশন, যেখানে রেকটাম বা মলাশয় মলত্যাগের সময় ভাঁজ হয়ে যায়, ফলে মল আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। অপর কারণটি হলো পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশন, যেখানে রোগী সঠিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে অক্ষম হন।
অন্য একটি কারণ হলো রেকটামের থলে জরায়ুর পাশে ঢুকে যাওয়া, যা মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি করে। এসব কারণে রোগীর মলত্যাগ একটি বিভীষিকায় পরিণত হয়।
চিকিৎসা: বর্তমানে এই সমস্যার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব। এর মধ্যে একটি হলো STARR (Stapled Trans Anal Resection of Rectum) পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় মেশিনের সাহায্যে ভাঁজ হয়ে যাওয়া রেকটামকে কেটে আবার জোড়া দেওয়া হয়, যা পায়ুপথের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। ফলে পেটের অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে না এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। যদিও এটি একটি জটিল অপারেশন, কিন্তু উপযুক্ত হাতে এর ফলাফল চমৎকার। তাই প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সর্বদা উত্তম।
লেখক: কোলোরেক্টাল সার্জন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।