হেপাটাইটিস লিভারের প্রদাহ সৃষ্টিকারী একটি রোগ, যা শরীরে নির্দিষ্ট ওষুধের বিপাকের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে পারে। দাঁতের অপারেশন করার আগে সর্বদা লিভার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
হেপাটাইটিস বি লিভারের ক্ষতি ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি একটি রক্তবাহিত সংক্রমণ যা সাধারণত রক্ত এবং যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আজকের লেখায় হেপাটাইটিস বি রোগ, ডেন্টিস্ট ও রোগীদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হবে।
ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার সময় আপনার চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, যদি আপনি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হন, তাহলে তা লুকানো উচিত নয়, কারণ এ রোগটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পাশাপাশি ডেন্টিস্টের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। ডেন্টাল অফিসে হেপাটাইটিস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, কারণ এটি মূলত রক্তের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। ডেন্টাল কার্যক্রমের সময় এই ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডেন্টিস্টদের হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। তাই, ডেন্টাল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অবশ্যই হেপাটাইটিসের টিকা গ্রহণ করা উচিত এবং রোগীদেরও এই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর, যা জীবনব্যাপী সুরক্ষা প্রদান করে।
প্রত্যেকটি ডেন্টাল চেম্বারে নিশ্চিত করতে হবে যে সকল যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করা হচ্ছে এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। ডেন্টাল সহকারী ও ডেন্টিস্টের উচিত নিজেদের সুরক্ষার জন্য যথাযথ পিপিই ব্যবহার করা এবং রোগীর চিকিৎসার পরে সমস্ত সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করা।
ডেন্টাল চেয়ারে বসার আগে নিশ্চিত করুন যে, পূর্ববর্তী রোগীর চিকিৎসার পরে চেয়ার ও অন্যান্য পৃষ্ঠগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে। কোনো দৃশ্যমান রক্ত বা লালা থাকলে তা পরীক্ষা করুন এবং নিশ্চিত করুন যে ডেন্টিস্ট সবকিছু জীবাণুমুক্ত করেছেন।
আপনাকেও কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে:
১. **ডেন্টাল টিমকে অবগত করুন:** যদি আপনি তীব্র হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন, জরুরি দাঁতের যত্ন নিতে পারেন, তবে নিয়মিত দাঁতের যত্ন স্থগিত রাখুন। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস অনেক সময় শনাক্ত হয় না।
২. **সামগ্রিক চেকআপ করান:** লিভারের রোগ মুখের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন ও জ্বালাপোড়ার ঝুঁকি বাড়ে। মুখের কোণে ফাটল, স্বাদ কমে যাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং মাড়ির প্রদাহ সাধারণ উপসর্গ।
৩. **রক্তপাত ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে সাবধান:** লিভারের রোগ রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমাতে পারে, যা আক্রমণাত্মক পদ্ধতির পরে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এখন, দাঁতের অপারেশন করার আগে সর্বদা আপনার লিভার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এই বিষয়ে অবহেলা না করে সকলকে যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, ডেন্টাল পিক্সেল, সাতমসজিদ সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।