আপনার বয়স কি ৪০ পেরিয়েছে? বর্তমান সময়ে ৪০ বছর বা তার আগেই মানব শরীরে হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যদি আপনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন কিংবা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ হৃদরোগে ভুগছেন, তাহলে আপনার জন্য এই বয়সেই হার্টের অসুখের সম্ভাবনা আছে। নেশা জাতীয় দ্রব্য যেমন তামাক বা মদ পানেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার হার্টের চেকআপ করা উচিত। এই চেকআপের মাধ্যমে হার্টের সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়বে, যা আপনাকে সতর্ক থাকার সুযোগ দেবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে জটিলতা এড়াতে সহায়তা করবে।
হার্টের চেকআপের জন্য সাধারণত কিছু পরীক্ষা করা হয়, তবে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সব ধরনের পরীক্ষা প্রয়োজন নাও হতে পারে। যদি আপনি হার্টের কোনো উপসর্গে ভুগছেন না, তবে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, রক্তের সুগার এবং লিপিড প্রোফাইলের মতো পরীক্ষা যথেষ্ট।
যদি হৃদরোগের উপসর্গ অনুভব করেন—যেমন পরিশ্রমকালে বুকের চাপ, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপিয়ে ওঠা—তাহলে এসবের সঙ্গে ইটিটি (Exercise Tolerance Test) বা টিএমটি (Treadmill Test) করানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে ইটিটি করার জন্য হার্ট স্পেশালিস্টের অনুমতি প্রয়োজন।
অতিরিক্ত কিছু পরীক্ষার জন্য যেমন হলটার মনিটরিং এবং সিটি এনজিওগ্রামও করতে হতে পারে। প্রয়োজন হলে ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন, থাইরয়েড হরমোন, এবং লিভার ফাংশন টেস্টের মতো পরীক্ষা করা হতে পারে। উল্লেখ্য, অধিকাংশ পরীক্ষাই নন-ইনভেসিভ এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
কনভেনশনাল এনজিওগ্রাম এবং ইপি স্টাডির মতো কিছু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং এগুলো কাটাছেঁড়া পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়, তাই কিছু ঝুঁকি থাকে।
ইসিজির মাধ্যমে হৃদস্পন্দন, হার্টের গতি এবং হার্টব্লকজনিত সমস্যা শনাক্ত করা যায়। হার্ট অ্যাটাক হলে সেটিও ইসিজির মাধ্যমে ধরা পড়ে। তবে ইসিজি ভালো হলে সেটির মানে এই নয় যে আপনার হার্ট সম্পূর্ণ সুস্থ। পূর্বে যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে, তবে ইসিজিতে তার আলামত থাকতে পারে, তবে কখন ঘটেছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
ইকোকার্ডিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের ছবি দেখা যায় এবং বিভিন্ন অংশের মাপজোক করে অসংগতি নির্ণয় করা সম্ভব। হার্টে কোনো অস্বাভাবিক ছিদ্র আছে কিনা এবং হার্ট ভাল্বের অবস্থানও নির্ধারণ করা যায়।
ইটিটির মাধ্যমে হার্টের রক্ত সরবরাহে কোনো ঘাটতি আছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়।
লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।