দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:৩১

“বুকে ব্যথা: বিলম্বিত বিপদের সংকেত”

হঠাৎ করে বুকে ব্যথা শুরু হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বয়স ৩০ হলে বুকের বা বুকের আশেপাশে যে কোনো ধরনের ব্যথা বা অস্বস্তি হলে সেটিকে প্রথমে হার্টের ব্যথা হিসেবে ধরে নিতে হবে। কারণ, হার্টের ব্যথা অন্য কোনো ব্যথার তুলনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হার্টের সমস্যায় মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি এবং দ্রুত চিকিৎসা না নিলে হার্টের মাংসপেশী দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘটনা-১: সাদেক সাহেবের বয়স ৩৭। অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় বুকে ব্যথা অনুভব করেন। কি করা উচিত বুঝে ওঠার আগেই তিনি মেঝেতে পড়ে যান। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ইসিজি করে ডাক্তার জানান—ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক! ৩০০ মিগ্রাম ডিসপ্রিন, ১৮০ মিগ্রাম টিকারেল এবং ৮০ মিগ্রাম এ্যাটোভা খাইয়ে দ্রুত সিসিইউতে পাঠানো হয়। এ্যানজিওগ্রামের মাধ্যমে দেখা যায় তাঁর সবচেয়ে বড় রক্তনালী (LAD) শতভাগ বন্ধ হয়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে সেটি খুলে একটি রিং (Stent) বসানো হয়। সাদেক সাহেবের বুকের ব্যথা কমে যায় এবং একদিন সিসিইউতে থাকার পর তিন দিনের মাথায় তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। পরবর্তী ফলো আপে দেখা যায় তাঁর হার্টের পাম্পিং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

ঘটনা-২: মোসলেম উদ্দিন সাহেব, বয়স ৬০, ডায়াবেটিক রোগী। রাত ১০টা থেকে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, কিন্তু বুকে কোনো ব্যথা ছিল না। পরিবারের সদস্যরা মনে করেন এটি অ্যাজমা অ্যাটাক। রাত ১টার দিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর ইসিজি করা হলে দেখা যায় হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। রোগী ভর্তি হতে রাজি না হলেও পরে বাধ্য হয়ে তাঁকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগী বা পরিবার রাজি হয়নি, ফলে স্ট্রেপ্টোকাইনেজ দেওয়া হয় যা ব্লক অপসারণে ব্যর্থ হয়। সকালে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে এবং লাইফ সাপোর্টে দিতে হয়। দুই দিন লড়াই করার পর মোসলেম উদ্দিন হৃদস্পন্দনহীন হয়ে মারা যান।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ:

বয়স ৩০ এর বেশি হলে বুকে বা বুকের আশেপাশে কোনো ব্যথা হলে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।

ডায়াবেটিক রোগীদের স্নায়ু দুর্বল হওয়ায় অনেক সময় তারা ব্যথা অনুভব করেন না।

বুকে অস্বস্তি বা চাপ অনুভব করলে সেটিকে অ্যাজমার এ্যাটাক হিসেবে ভুল বোঝা উচিত নয়।

হঠাৎ তীব্র অসুস্থতা বোধ করলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

জরুরি অ্যানজিওপ্লাস্টি হলো আধুনিক চিকিৎসা যা মৃত্যুঝুঁকি কমায়।

চিকিৎসকের উপর আস্থা রাখতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

যেকোনো সময়, সমস্যা দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে।

লেখক: সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট