বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে হাঁটু ব্যথা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দেখা যায়, যার অন্যতম প্রধান কারণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়। আমাদের হাঁটুর জয়েন্টে একটি নরম ও মসৃণ আবরন থাকে, যাকে কার্টিলেজ বলা হয়। এই কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে অমসৃণ হয়ে গেলে জয়েন্ট নড়াচড়ার সময় ব্যথা অনুভূত হয় এবং মাঝে মাঝে হাঁটু ফুলে যায়। এটাই মূলত অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর বাত।
সহজভাবে বলতে গেলে, হাঁটুর জয়েন্টের কচকচে প্রলেপটি ক্ষয় হয়ে গেলে এবং জয়েন্টের ভেতরের ফ্লুইডের সঙ্গে মিশে যায়, তখন ব্যথা হয়। এটিই অস্টিওআর্থ্রাইটিস হিসেবে পরিচিত।
### হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণসমূহ:
1. **বয়সের প্রভাব:** বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কার্টিলেজের পানি বাড়ে এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমে, ফলে তরুনাস্থি বা কার্টিলেজ ক্ষয় হয়।
2. **অতিরিক্ত ওজন:** হাঁটু শরীরের ওজন বহন করে, তাই অতিরিক্ত ওজন হাঁটুতে চাপ সৃষ্টি করে, যা ক্ষয় বৃদ্ধি করে।
3. **আঘাত বা ইনজুরি:** যেকোনো ইনজুরি বা আঘাত কার্টিলেজের ক্ষয় ঘটাতে পারে।
4. **সায়নোভিয়াল ফ্লুইডের কমে যাওয়া:** হাঁটুর জয়েন্টের ফ্লুইড কমে গেলে জয়েন্টে ঘর্ষণ হয়, ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে।
### অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণ:
– হাঁটুতে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া।
– জয়েন্ট ভাঁজ করতে সমস্যা হওয়া।
– হাঁটু গেড়ে বসতে এবং সিঁড়ি ওঠানামা করতে কষ্ট হওয়া।
– হাঁটুতে কটকট শব্দ হওয়া।
### চিকিৎসা:
প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং ফিজিওথেরাপি কার্যকর হতে পারে। ম্যানিয়াল থেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি, স্টেরয়েড ইনজেকশন এবং থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যদি এগুলোর মাধ্যমে আশানুরূপ ফল না পাওয়া যায়, রিজেনারেটিভ থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। এ থেরাপি সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত এবং এফডিএ অনুমোদিত।
রিজেনারেটিভ থেরাপির মাধ্যমে শরীরের নিজস্ব পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনর্গঠন করা হয়। এতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, প্রদাহ কমে, এবং নতুন টিস্যু গঠনের প্রক্রিয়া চালু হয়, ফলে ব্যথামুক্ত হওয়া সম্ভব হয়।
এই থেরাপির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি হাঁটু ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার এবং অন্যান্য জয়েন্টের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।